তানভীর আহমেদ || সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের দেশি চাল, ডিম, সবজি ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। এ সময় বস্তাপ্রতি চালের দাম কমেছে প্রায় ৫০ টাকা আর পেঁয়াজের কেজিপ্রতি কমেছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। পাশাপাশি বাজারে ডিম ও সবজির দামেও সামান্য নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার ও শান্তিনগর ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
পাইকারি বাজারে চালের দাম কমলেও খুচরা বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি সপ্তাহে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে সরু জাতের মিনিকেট-নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজি, মাঝারি জাতের পাইজাম-আটাশ চাল ৬০ থেকে ৭৫ টাকা এবং মোটাজাতের চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে বর্তমানে ভারতীয় নাজিরশাইল চাল ৬৮ থেকে ৭২ টাকা কেজি এবং স্বর্ণা-৫ বা পাইজাম ৫২ থেকে ৫৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রনি রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাঝারি জাতের পাইজাম চালের দাম বস্তায় ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। পাইকারি বাজারে ইন্ডিয়ান নাজিরশাইল কেজিতে পাঁচ থেকে সাত টাকা কমে ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৭৫০ টাকা এবং পাইজাম বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৮৫০ টাকায়। সিদ্ধ চালের দাম কিছুটা নিম্নমুখী হলেও সব ধরনের আতপ চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
তেজগাঁও এলাকার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী জনতা রাইস এজেন্সির সোহরাব হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ভারত থেকে চাল আমদানির পর দেশীয় করপোরেট কোম্পানিগুলো সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা অর্থাৎ কেজিতে এক টাকার মতো কমিয়েছে।
কিশোরগঞ্জ রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ভারত থেকে চাল আমদানির পর বাজারে চাহিদা কমে গেছে। এখন কোম্পানির কর্মকর্তারা চাল দিতে প্রতিদিনই ফোন দেন। কিন্তু এর আগে অর্ডার দিয়েও চাল পাওয়া যায়নি।
চাঁদপুর রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বাচ্চু মিয়া বলেন, চালের বাজার সাময়িক নিম্নমুখী হলেও কোম্পানিগুলো সুযোগের অপেক্ষায় আছে। আমদানি বন্ধ হলেই দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি প্রয়োজন। একই এলাকার খুচরা বিক্রেতা বাবলু বলেন, আগের বাড়তি দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। দাম কমেনি।
ভারত থেকে আমদানির ফলে পেঁয়াজের বাজারেও প্রভাব পড়েছে। যদিও ভারতীয় পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতারা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এর পরও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা কমে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় ডিমের দাম কিছুটা কমে ডজন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে আগের বাড়তি দামেই ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচাবাজারে সবজির দামে বাজারভেদে ভিন্নচিত্র লক্ষ করা গেছে। গতকাল শনিবার কারওয়ান বাজারে সব ধরনের সবজির দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০-১৫ টাকা কম লক্ষ করা গেছে। তবে অন্যান্য কাঁচাবাজারে সব ধরনের সবজি আগের সপ্তাহের মতো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আয়মান আহমেদ খোকন বলেন, গত দুই-তিন দিনের বৃষ্টিতে কাদা জমে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতা আসতে পারছেন না। তাই লোকসানে সবজি বিক্রি করছি আমরা। তবে নয়াবাজারের সবজি বিক্রেতা হামীম জানান, মৌসুমের একেবারে শেষ, এতে সরবরাহ কমে সবজি বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। নতুন সবজি বাজারে ওঠার আগ পর্যন্ত এ অবস্থা থাকবে। তবে ঊর্ধ্বমুখী বাজার কিছুটা কমতির দিকে।
তবে এ সময়ে আটার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। খোলা আটা ৪৫ থেকে ৫২ টাকা এবং প্যাকেট আটা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা ময়দা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজারে আলু আর পেঁপের দামই একটু কম। অন্যসব সবজি আগের সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কম হলেও বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। ৬০-৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা কাঁচামরিচের দাম বেড়ে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীতে বিভিন্ন কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, আলু ২০-২৫ টাকা, কচুর লতি ৬০-৭০ টাকা, বরবটি ৬০-৭০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, পটোল ৬০-৭০ টাকা, ধুন্দল ৬০-৭০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০-৬০ টাকা এবং করলা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়স ৬০-৭০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, বেগুন (গোল) ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বেগুন (লম্বা) ৭০-৮০ টাকা, কচু (গুটি) ৫০-৬০ টাকা এবং গাজর প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম কিছুটা কমে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস এক হাজার ১০০ টাকা থেকে এক এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সব ধরনের মাছের দাম কিছুটা বাড়তি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।