আন্তর্জাতিক ডেস্ক || উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি তার দেশের ওপর পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের দাবি বাদ দেয়, তবে আলোচনায় বসতে তার কোনো আপত্তি নেই। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য উত্তর কোরিয়া কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করবে না।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ এ তথ্য জানিয়েছে। খবর রয়টার্সের।
রবিবার সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলিতে দেওয়া ভাষণে কিম বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে, আমার এখনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সুন্দর স্মৃতি মনে আছে।” ট্রাম্পের এর আগে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন দুই নেতার মধ্যে তিনবার বৈঠক হয়েছিল।
কিমের মন্তব্য এমন সময়ে এলো, যখন দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন উদারপন্থি সরকার ট্রাম্পকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপ পুনরায় শুরু করার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে শান্তি আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর এই প্রথম কিম সরাসরি ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ করলেন।
কিম বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে অযৌক্তিক দাবি ত্যাগ করে ও বাস্তবতা মেনে নেয় এবং প্রকৃত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের আলোচনায় না বসার কোনো কারণ নেই।”
মার্কিন ভিত্তিক থিংকট্যাংক স্টিমসন সেন্টারের উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ র্যাচেল মিনইয়ং লি বলেন, “এটি একধরনের পূর্বপ্রস্তুতি। এটি কিমের ট্রাম্পকে মার্কিন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নীতি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান, যার অর্থ হলো, যদি যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ দাবি ত্যাগ করে, তাহলে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে আবারো মুখোমুখি আলোচনায় বসতে পারেন।”
তবে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় অনীহা প্রকাশ করেন কিম। তিনি দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘প্রধান শত্রু’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া আসলে পারমাণবিক যুদ্ধের প্রস্তুতি। তাই পারমাণবিক অস্ত্র উত্তর কোরিয়ার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অপরিহার্য।”
অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “উত্তর কোরিয়া বছরে ১৫–২০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে। এই উৎপাদন স্থগিত করার জন্য যেকোনো চুক্তিই শেষ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।”
তিনি বলেন, “এর উপর ভিত্তি করে, আমরা পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসের জন্য মধ্যমেয়াদি আলোচনায় এগিয়ে যেতে পারি এবং দীর্ঘমেয়াদে, একবার পারস্পরিক আস্থা পুনরুদ্ধার করা হলে এবং উত্তর কোরিয়ার শাসন-নিরাপত্তা উদ্বেগ হ্রাস পেলে, আমরা পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।”
তবে কিম ধাপে ধাপে সমাধানের প্রস্তাবকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। উত্তর কোরিয়ার নেতা বলেন, “বিশ্ব জানে, কোনো দেশ নিরস্ত্রীকরণে রাজি হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র কী করে। তাই আমরা কখনো পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়ব না।”
নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে কিম বলেন, “নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য শিক্ষা হয়েছে। এতে আমরা আরো শক্তিশালী ও সহনশীল হয়েছি।”
২০০৬ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষার পর থেকে উত্তর কোরিয়া জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞাগুলো সামরিক উন্নয়নের জন্য তহবিল সঙ্কুচিত করলেও, পিয়ংইয়ং পারমাণবিক অস্ত্র এবং শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে।