1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Golam Saroar : Golam Saroar
পদদলিত হয়ে মৃত্যু: বিজয়কে চড়া মূল্য দিতে হবে? - দৈনিক প্রথম ডাক
সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪১ অপরাহ্ন

পদদলিত হয়ে মৃত্যু: বিজয়কে চড়া মূল্য দিতে হবে?

বিনোদন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৩ বার দেখা হয়েছে
তামিল নাড়ুর করুরের সমাবেশে উপচেপড়া মানুষের ঢল

বিনোদন ডেস্ক || গত শনিবার করুরের পরীক্ষায় ফেল করেছেন থালাপাতি বিজয়। করুরের সমাবেশে পদদলিত হওয়ার ঘটনার পর, তাড়াহুড়া করে চেন্নাই ফিরে যাওয়ার ভুল সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এটি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরুর আগেই শেষ করে দিতে পারে কি না, তা সময়ই বলবে। কিন্তু তার রাজনৈতিক চিত্রনাট্য যে বিশৃঙ্খল হয়ে গেছে, তা নিশ্চিত।

বিজয় যদি করুরে থাকতেন, সেটা সমাবেশস্থল অথবা হাসপাতাল—তাহলে বিশৃঙ্খলা বাড়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তার দৃশ্যমান উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে আপনি যখন দেখাতে চান, আপনি জনগণের পাশে আছেন। এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যখন আপনি ২০২৬ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চান।

সন্দেহ নেই যে, বিজয় এ ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন, তার ‘হৃদয় ভেঙে’ গেছে। মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে বিজয়ের ‘হৃদয় ভাঙার’ অনুভূতি ব্যক্ত করাই যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে যখন বিজয়ের সরাসরি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দল ডিএমকে করুরে তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব পাঠিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এম. কে. স্ট্যালিন থেকে শুরু করে করুরের এমএলএ সেন্থিলবালাজিসহ অসংখ্য ডিএমকের কর্মী উপস্থিত রয়েছেন। দলটি দেখাতে চেয়েছে, একটি নতুন রাজনৈতিক দল রাতারাতি ‘লার্জ-ক্যাপ’ পার্টিকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে না।

বিজয় যদি করুরে নাই থাকতেন, অন্তত তিরুচির (ত্রিচি) কাছাকাছি থেকে (যা ৭৫ কিলোমিটার দূরে) ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারতেন। তামিলদের প্রতি তার ভালোবাসা প্রমাণ করার পথ ছিল করুরে শারীরিকভাবে উপস্থিত থেকে। এমনকি, শ্রেষ্ঠ অভিনয়ও এই কৌশলগত ভুলকে ঢাকতে পারবে না। বিজয় দেখিয়ে দিলেন যে, তিনি এখনো ‘জনগণের নায়ক’ হয়ে ওঠেননি, যেমনটা তিনি দাবি করেন। মজার বিষয় হলো—তার পরবর্তী সিনেমা ‘জন নায়ক’, এটি আগামী বছর মুক্তি পাবে।

আমরা আগেভাগেই অনেক কিছু ধরে নিচ্ছি। সত্যি বলতে, এই ট্র্যাজেডি আসন্ন ছিল। ত্রিচি, নাগাপট্টিনম এবং তিরুভারুরে যেসব রোড শো হয়েছে, সেগুলোতে ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি ছিল। আর এসব দৃশ্য না দেখা একমাত্র অন্ধের পক্ষেই সম্ভব। প্রতিটি শনিবারের সভায় দেখা গেছে মানুষের ঢল, যারা নিজেদের বিপদে ফেলে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার, গাছ আর মন্দিরের প্রাচীরে উঠে পড়ছিলেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো নয়, বিজয়ের দল ‘তামিলাগা ভেটরি কাজাগম’ (টিভিকে) এর জনসভায় আসা লোকজন পয়সা দিয়ে আনা হয়নি, বরং ভক্তির কারণে হাজির হয়েছেন। ফলে তারা ছিল খুবই উৎসাহী এবং আবেগী।

টিভিকের আয়োজকরা বলেছিলেন, ১০ হাজার মানুষের সমাগম হবে, তাহলে করুরের পুলিশ কীভাবে এই কথা বিশ্বাস করল? পুলিশের কাছে কী কোনো গোয়েন্দা প্রতিবেদন ছিল না? যদি না-ই থাকে, তবে সেটা কেন? যদি থেকেও থাকে, তাহলে সেটা কি এই ভবিষ্যদ্বাণী করেনি যে, ভিড় তার কয়েক গুণ হবে? আনুমানিকভাবে ৩০ হাজারের বেশি লোক সেখানে উপস্থিত ছিল বিজয়ের কথা শোনার জন্য। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে নামাকালে পৌঁছানোর কথা ছিল বিজয়ের। কিন্তু সভা শুরু হয় বিকাল ৩টার দিকে। ফলে করুরের সভা পিছিয়ে গিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে শুরু হয়। এতক্ষণে ভিড় বেড়েই চলেছিল, তাদের অপেক্ষা বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে তোলে।

এই বিপর্যয়ের দায়ভার বিজয় ও তার দল টিভিকে যেমন নেবে, তেমনি জেলা পুলিশও সমানভাবে দায়ী। কোনো প্রশাসনেরই উচিত নয়, যেকোনো রাজনৈতিক দলকে পুরো একটি শহর অবরুদ্ধ করতে দেয়ার। যে পরিস্থিতিতে একটি অ্যাম্বুলেন্স চলারও জায়গা থাকে না। যদি কোনো দল আইন মানতে না চায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তারা যদি তারকাখ্যাতি বা রাজনৈতিক প্রভাব দেখে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়, তাহলে এমন সিনেমা-রাজনৈতিক ‘পাইড পাইপারদের’ হাতে আরো মৃত্যু পরোক্ষভাবে লেখা হবে।

করুর দেখিয়ে দিল, ২০২৫ সালে বেঙ্গালুরুর চিনাস্বামী স্টেডিয়ামে আরসিবি জয়ের উদযাপন, হায়দরাবাদে সন্ধ্যা থিয়েটারে আল্লু অর্জুন আসার সময় বা প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলায় যেসব পদদলিতের ঘটনা ঘটেছিল, সেখান থেকে কোনো শিক্ষা নেওয়া হয়নি। কারণ ক্ষমতায় যারা থাকে, তারা ভাবে কয়েক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিলেই তাদের দায়িত্ব শেষ।

টিভিকে একজন ব্যক্তি কেন্দ্রিক দল। তাদের কাছে ডিএমকে বা এআইএডিএমকে-এর মতো সুসংগঠিত স্বেচ্ছাসেবক বা সাংগঠনিক পরিকাঠামো নেই, যারা নেতার আগমন-প্রস্থানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারে। বিজয়ের নিঃসন্দেহে বিপুল জনপ্রিয়তা আছে, এমনকি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিবর্তন আনার সম্ভাবনাও আছে। কিন্তু করুর হবে একটি বড় রকমের স্পিড ব্রেকার–একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ট্র্যাজেডি, যা এড়ানো যেত।

করুরের ঘটনা দেখিয়ে দিল, পর্দার বিজয় আর বাস্তবের বিজয় এক নয়। ২০১৬ সালে মুক্তি পায় বিজয় অভিনীত ‘থেরি’ সিনেমা। এতে স্কুলবাস ডুবে যাওয়ার পর নিজের কন্যা ও অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের বাঁচায় বিজয়। অথচ বাস্তবে চেন্নাই যাওয়ার জন্য বিমান ধরতে বিজয়ের দৌড় দেখিয়ে দিল, রিল আর রিয়েল এক নয়।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক টি. এস. সুধীরের লেখা থেকে অনূদিত

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed By: SISA IT