খেলাধুলা ডেস্ক || ক্রিকেট মানেই রোমাঞ্চ, আর ভারত–পাকিস্তান মানেই অগ্নি-ঝরা আবেগ। ফরম্যাট বদলায়, প্রজন্ম বদলায়, কিন্তু এই দ্বৈরথের উত্তাপ কখনও কমে না। কেউ বলে, দুই দেশের ম্যাচ আসলে খেলার চেয়েও বেশি কিছু; স্মৃতি, প্রতিশোধ, আত্মমর্যাদা আর এক চিমটি রাজনীতির মিশ্রণে তৈরি এক অদ্ভুত আবহ। এবার সেই আবহ ফের নামছে দুবাইয়ের মাটিতে, এশিয়া কাপের রঙিন আসরে।
নতুন রূপে দুই দল:
এই ম্যাচে নেই অনেক পরিচিত মুখ। কোহলি–বাবর, রোহিত–রিজওয়ানের মতো মহাতারকারা এবার সরে গেছেন আড়ালে। জায়গা করে নিয়েছেন একঝাঁক তরুণ। ভারত প্রথম ম্যাচেই আমিরশাহিকে উড়িয়ে আত্মবিশ্বাসে উজ্জ্বল। শুভমন গিল আর অভিষেক শর্মার ব্যাট থেকে এসেছে ঝড়ো সূচনা। মাঝের সারির পরীক্ষা বাকি থাকলেও স্পিন-নির্ভর বোলিং আক্রমণই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
অন্যদিকে পাকিস্তানও সাজিয়েছে নতুন চেহারার দল। প্রথম ম্যাচে শুরুতে ব্যাটিং ধসে গেলেও পরে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছে তারা। তবে তাদের মূল ভরসা স্পিন বিভাগই, যা ভারতীয় ব্যাটিংয়ের জন্য বড় পরীক্ষা হয়ে উঠতে পারে।
বাইশ গজের বাইরের ঝড়:
তবে এই ম্যাচ ঘিরে আলোচনার ঝড় বাইশ গজেই সীমাবদ্ধ নয়। পহেলগামের জঙ্গি হামলার রক্ত এখনও শুকোয়নি। তার মধ্যেই কেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে ভারত? এ প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। কেউ বলছেন, দ্বিচারিতা; কেউ চাইছেন ম্যাচই বয়কট হোক। আবার শাসকদল বলছে, বহুজাতিক টুর্নামেন্টে না খেললে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। তাই খেলা ছাড়া উপায় নেই।
রাজনীতির টানাপোড়েনের সঙ্গে মিশেছে আবেগ। শহীদ সেনার পরিবারের প্রশ্ন, ‘‘আমাদের ক্ষত এখনও তাজা, তবু কেন পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট?’’ কঠিন সেই প্রশ্ন যেন ম্যাচের উত্তেজনার চেয়েও বেশি আলোড়ন তুলেছে।
মাঠে সম্ভাব্য দ্বৈরথ:
রাজনীতি আর বিতর্কের আড়ালে ক্রিকেটের লড়াইও কিন্তু সমান গুরুত্বপূর্ণ। একপাশে পাকিস্তানের বাঁ-হাতি পেস আক্রমণ, অন্যপাশে ভারতের উদীয়মান তারকা শুভমন গিল। একসময় যেমন কোহলি–শাহিন আফ্রিদির দ্বৈরথে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে বসে থাকত দর্শক, এবার সেই জায়গায় নজর থাকবে গিলের ওপর। এছাড়া স্পিন–বোলিং বনাম ভারতীয় ব্যাটিং—এই যুদ্ধও ম্যাচের ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে।
পরিসংখ্যান:
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে ভারত-পাকিস্তান মানেই নাটকীয়তা, উত্তেজনা আর স্মৃতির ভাণ্ডার। ২০০৭ সালের ডারবান ফাইনাল, যা শেষ হয়েছিল টাই হয়ে। তারপর বোল্ডআউটে ভারতের জয়। যেটা আজও ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে অমলিন। সে ম্যাচটি এখনও পর্যন্ত এই ফরম্যাটে একমাত্র বোল্ডআউট নির্ধারিত ফাইনাল হিসেবে ইতিহাসের পাতায় খোদাই হয়ে আছে।
সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি লড়াইয়ে ১৩ ম্যাচে ভারতের জয় ৯ বার, পাকিস্তানের তিনবার, আর একবার টাই। সর্বশেষ লড়াই হয়েছিল ১৫ মাস আগে, নিউ ইয়র্কে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। সেখানে ৬ রানে জিতেছিল ভারত। তারও আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল, সেখানেও জয় পেয়েছিল ভারত।
ভারত এখনকার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, পাকিস্তান স্বাদ পেয়েছিল শিরোপার অনেক আগে, ২০০৯ সালে। তাই লড়াই শুধু বর্তমান ফর্ম নয়, দুই দেশের ক্রিকেট ঐতিহ্যেরও। আর এই ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাক্ষী হতে চাইছে গোটা দুবাই।
টিকিটের দোলাচল:
অদ্ভুত এক বাস্তবতাও ঘিরে ধরেছে এই ম্যাচকে। যেখানে ভারত–পাকিস্তান মানেই কানায় কানায় ভর্তি স্টেডিয়াম, সেখানে দুবাইয়ের আয়োজকেরা একেবারে উল্টো পরিস্থিতিতে টিকিটের দাম কমাতে বাধ্য হয়েছেন। তবুও আসন পূর্ণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
শেষকথা:
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের বাতাসে তাই একসঙ্গে মিশেছে আবেগ, অনিশ্চয়তা, রাজনীতি আর ক্রিকেটের বিদ্যুৎ ঝলকানি। খেলা হবে তো বটেই, কিন্তু এ ম্যাচকে কেবল ক্রিকেটীয় প্রতিযোগিতা বলা যায় না। এটি আসলে দুই প্রতিবেশীর ইতিহাস, রাজনীতি আর আবেগের বহমান নদী- যেখানে ক্রিকেট কেবল এক অজুহাত, আর ফলাফল যতই হোক না কেন, আলোচনার ঝড় থামবে না সহজে।