ববি প্রতিনিধি || বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও সেই অনুপাতে বৃদ্ধি হয়নি আবাসন সুবিধা। মাত্র চারটি হলে সীমিত আসনের কারণে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে ক্যাম্পাসের বাইরে মেস ও ভাড়া বাসায়। এতে করে শিক্ষা ব্যয় ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। ভাড়া বাসায় থেকেই মিলছে না স্বস্তি; যাতায়াতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা।
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছয়টি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বাড়তে বাড়তে এখন বিভাগ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫টিতে। এই সুবিধার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে; অথচ বাড়েনি আবাসন ও পরিবহন সুবিধা, যার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় শিক্ষার্থীদের একদিকে যেমন অর্থনৈতিক চাপ নিতে হচ্ছে; তেমনি সাংস্কৃতিক চার্চ, বিতর্কসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম থেকেও ছিটকে পড়ছেন তারা। ক্লাস শেষে বাসায় ফেরার বাস ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় ক্যাম্পাস সঙ্গে সংযোগ কমছে শিক্ষার্থীদের; সৃজনশীলতা ও মানসিক দক্ষতার বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯৬৪৬ জন। ছেলে ও মেয়েদের দুটি করে মোট চারটি হলে আসন মাত্র ১২০২টি। এর মধ্যে বিজয় ২৪ হলে ২৮৮টি, শেরে বাংলা হলে ৩০০টি, তাপসী রাবেয়া হলে ৩১৪টি এবং সুফিয়া কামাল হলে ৩০০টি আসন রয়েছে।
‘মাস্টার্স জোন’ বাদ দিয়ে হলে প্রতিটি কক্ষে আটজন করে শিক্ষার্থী থাকার সুযোগ রাখা হলেও চারটি হলে সর্বোচ্চ ১৮৬৭ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করতে পারছেন। অর্থাৎ মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৯.৩৫ শতাংশ আবাসিক সুবিধা পাচ্ছেন, বাকি ৮০.৬৪ শতাংশকে থাকতে হচ্ছে মেস ও ভাড়া বাসায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কাগজে-কলমে আসনের সংখ্যা যেটি দেখানো হয়, বাস্তবে হলে শিক্ষার্থী থাকেন তার চেয়ে কম। পড়াশোনা শেষ বা অন্য কারণে শিক্ষার্থী হল ছেড়ে গেলেও সিট দীর্ঘদিন তার নামেই ফাঁকা থাকে। আবার সিট বরাদ্দ পেতে হলে থাকতে হয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বা কোনো প্রভাবশালী শিক্ষকের রেফারেন্সে। ফলে যাদের সিট সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তারাই বঞ্চিত হন।
স্থানীয় বাড়িওয়ালারা শিক্ষার্থীদের কাছে এক কক্ষের সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া দাবি করছেন। এতে একজন শিক্ষার্থীর মাসিক খরচ দাঁড়াচ্ছে অন্তত ৮ হাজার টাকা, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
আবাসন সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিবহন সংকট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০২২ সালের মধ্যে উন্নয়ন পরিকল্পনায় মোট ৩৫টি গাড়ি কেনার কথা থাকলেও ২০২৫ সাল পর্যন্ত এসে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ২২টি। এর মধ্যে ১০ হাজার শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য নির্ধারিত বাস রয়েছে মাত্র ১১টি। ফলে ভাড়া বাসায় থাকা শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের যাতায়াত এক বড় ভোগান্তির নাম।
বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অনাবাসিক শিক্ষার্থী সুকান্ত বৈদ্য বলেন, “আবাসন সংকটের অনেক কারণ থাকলেও প্রধান কারণ প্রশাসনের অযৌক্তিকভাবে ভর্তি সংখ্যা বৃদ্ধি। যে চারটি হলে আছে, সেখানে সক্ষমতার দ্বিগুণ শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন, যেখানে পড়াশোনার পরিবেশ নেই বললেই চলে। আমরা হলে সিট না পেয়ে বাইরে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। নিরাপত্তাহীনতা, খাবার পানির সংকট, বাড়িওয়ালাদের অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় আর পরিবহন সংকট; সব মিলিয়ে ভোগান্তি অসহনীয় হয়ে উঠেছে।”
শেরে বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ আবদুল আলীম বাছির বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বিভাগ বাড়লেও অবকাঠামো বাড়েনি। তাই বাধ্য হয়েই একটি কক্ষে চারজনের বদলে আটজনকে থাকতে হচ্ছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্ধারিত চারটি ক্যাটাগরির ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম বলেন, “এটা সত্য যে এখানে আবাসন সংকট প্রকট। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ধাপের উন্নয়ন প্রকল্পের ফিজিবিলিটি টেস্টের অনুমোদন পাওয়া গেছে এবং প্রকল্প মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে নতুন তিনটি হল নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। আশা করছি হল নির্মাণ সম্পন্ন হলে আবাসন সংকট অনেকটাই কমে আসবে।”
প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পার হলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ধাপের উন্নয়ন প্রকল্প এখনো বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। যদিও ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি টেস্টের অনুমোদন পাওয়া গেছে এবং প্রকল্প মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে পাঁচ তলাবিশিষ্ট তিনটি নতুন হল (দুটি ছেলেদের ও একটি মেয়েদের) নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।