আন্তর্জাতিক ডেস্ক || গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিসরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শুরু হওয়া পরোক্ষ আলোচনার প্রথম দিনটি ‘ইতিবাচক’ পরিবেশে শেষ হয়েছে। মঙ্গলবারও এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
সূত্রের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, সোমবার (৬ অক্টোবর) মিসরের শার্ম আল-শেখ শহরে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার বৈঠকটি ‘ইতিবাচক’ ছিল এবং বর্তমান আলোচনা কীভাবে চলবে তার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে এই আলোচনা হয়।
হামাস প্রতিনিধিদল মধ্যস্থতাকারীদের বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণ বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
হামাস প্রতিনিধিদলের সদস্য ছিলেন হামাস নেতা খলিল আল-হাইয়া এবং জাহের জাবারিন। গত মাসে হামাসের এই দুই নেতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কাতারে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলি।
মিসরের বার্তা সংস্থা আল-কাহেরা নিউজের মতে, প্রথম দিনের আলোচনায় বন্দী ও বন্দীদের বিনিময়, যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার বিকেলে হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের জানান, মিসরে তার প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে চলমান আলোচনায় হামাস বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ‘রেড লাইন’ বা সীমারেখা আছে কি না; যেমন- হামাসকে নিরস্ত্র করার দাবি, এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, যদি কিছু শর্ত পূরণ না হয়, তাহলে আমরা তা করবো না। তবে আমার মনে হয়, আমরা বেশ ভালো অগ্রগতি করছি। আমি সত্যিই মনে করি আমরা এই চুক্তিটি সম্পন্ন করতে পারবো।
আলজাজিরা জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হামাসকে দর কষাকষির টেবিলে রাখার জন্য আরব-তুরস্ক যৌথ সমর্থনের জন্যও বেশ প্রশংসা করেছেন, তিনি ইসরায়েলি জনগণের প্রশংসা করেছেন এবং তিনি তার নিজস্ব বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের প্রশংসা করেছেন, যিনি এই আলোচনায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারও মার্কিন প্রতিনিধিদলের অংশ বলে জানা গেছে।
মিসরের আল-কাহেরা নিউজ নিশ্চিত করেছে যে, আজ মঙ্গলবারও ইসরায়েল ও হামাসের পরোক্ষ আলোচনা অব্যাহত থাকবে। এদিকে, আজ ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার দুই বছর পূর্তি, যেখানে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে বন্দী করা হয়েছিল।
তারপর থেকে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৬০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জনকে আহত করেছে।
গাজা যুদ্ধকে জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি, আন্তর্জাতিক আদালত এবং ইসরায়েলি অলাভজনক সংস্থাগুলোসহ শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
সোমবার যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনী গাজাজুড়ে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি পোস্টে বলেন, ট্রাম্পের ‘সাম্প্রতিক প্রস্তাব’ এই মর্মান্তিক সংঘাতের অবসান ঘটানোর জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে, যা কাজে লাগাতে হবে।”
জাতিসংঘ প্রধান আরো বলেন, “আরো রক্তপাত রোধ করতে এবং শান্তির পথ প্রশস্ত করার জন্য একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অপরিহার্য।”