বিনোদন প্রতিবেদক || বাংলা চলচ্চিত্রের অমর নায়ক সালমান শাহ। তার মৃত্যু আজও রহস্যে মোড়া, বেদনায় ভারী এক অধ্যায়। সেই রহস্যের জট খুলে ন্যায়বিচারের দাবিতে আবারো পথে নেমেছেন সালমান প্রেমীরা।
রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। তাদের হাতে ছিল পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড। এ সময় ভক্ত-অনুরাগীরা খুনিরা জেলে যাক, ছেলে হারা মায়ের ডাক’, ‘বিচার চাই, বিচার চাই, সালমান হত্যার বিচার চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
জামান নামের এক ভক্ত বলেন, “সালমান হত্যার মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আমরা এখানে উপস্থিত। মামলা দায়েরের ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। দেশে যারা আছেন, বিশেষ করে খলনায়ক ডন এবং সামিরা হককে আমরা প্রকাশ্যে দেখেছি। ডন কিছুদিন আগে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, তিনি আমাদের সঙ্গে এবং তার পরিবারের সঙ্গে প্রেস ক্লাবে বসবেন। তাহলে কি প্রমাণ করতে চেয়েছেন, যে সালমানকে হত্যা করা হয়নি? আজ ডন কোথায়?”
তিনি যোগ করেন, “মামলার দুইদিন পর ডন ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘আমি দুই-তিনদিন পর আত্মসমর্পণ করব।’ তিনি বলেছিলেন, বাসাতেই আছেন। তাহলে কেন এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি?”
মানববন্ধনে ভক্তরা সামিরা হকের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এক ভক্ত বলেন, “সামিরা বারবার চ্যালেঞ্জ করছেন যে সালমান আত্মহত্যা করেছেন। ২৯ বছর পর যখন অপমৃত্যু মামলা হত্যা মামলায় রূপ নিয়েছে এখন তিনি পালাচ্ছেন কেন? তিনি কেন ভয় পাচ্ছেন?”
ভক্তদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—পিবিআই প্রতিবেদনে যে পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছিল তা পুনরায় খতিয়ে দেখতে হবে। র্যাবের তদন্ত স্থগিত করে কেন পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল? পিবিআইয়ের পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদনে যেই অসঙ্গতিগুলো ছিল তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করতে হবে।
মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। আসামিদের আত্মগোপন বা পলায়ন প্রমাণ করে তারা অপরাধী। নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি পালিয়ে থাকে না। আদালতের নিকট ভক্তরা আবেদন করেন—পালিয়ে থাকা আসামিরা যেন আগাম জামিন না পায়। তাহলে আইন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামিদের আগাম জামিন দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আসামিদের অদৃশ্য পেশী শক্তির প্রভাবে ২৯টি বছর ধরে মামলাটি মিথ্যার মোড়কে আটকে ছিল। যা একটি দীর্ঘ সময়। তাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আর যেন বিলম্ব না হয় এজন্যে দেশের চলমান আইনের নিয়মানুসারে হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সরকারের কাছে সালমান শাহ ভক্তদের আবেদন, বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামিদের ইন্টারপোলের সহায়তায় খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করে দেশে এনে হত্যা মামলাটির বিচারকার্য অতি দ্রুত সম্পন্ন করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রাণের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
সর্বশেষ দাবি হলো, ডিবি ও সিআইডি থেকে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করে কেন ভুল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল, সেটারও সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে বিচার করতে হবে।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমান শাহের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর থানা-পুলিশ, সিআইডি, র্যাব ও পিবিআইসহ একাধিক সংস্থা তদন্ত চালায়। সব প্রতিবেদনেই ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও সালমান শাহর পরিবারের আপত্তিতে প্রতিবারই তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করা হয়। মানবন্ধনে উপস্থিত ভক্তরা দ্রুত বিচার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।