আন্তর্জাতিক ডেস্ক || যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভেনেজুয়েলার আকাশপথ ‘সম্পূর্ণভাবে বন্ধ’ বলে বিবেচনা করা উচিত। ওয়াংশিংটন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সরকারের ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে চাপ বৃদ্ধি করার মধ্যেই এ মন্তব্য করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তিনি আরো বিস্তারিত কিছু বলেননি। খবর রয়টার্সের।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) ট্রুথ সোশ্যালে করা এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “সব এয়ারলাইন্স, পাইলট, মাদক ব্যবসায়ী এবং মানব পাচারকারীদের উদ্দেশ্যে বলছি, অনুগ্রহ করে ভেনেজুয়েলার উপরের এবং আশপাশের আকাশসীমাকে পুরোপুরি বন্ধ বলে বিবেচনা করুন।”
রয়টার্স জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের ঘোষণার বিষয়ে জানতে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবং ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সামরিক অভিযান চালাচ্ছে কি না, তা জানেন না বলে জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে পেন্টাগন সাড়া দেয়নি। হোয়াইট হাউজ থেকেও কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ভেনেজুয়েলার সরকার স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে। এগুলোকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ‘ঔপনিবেশিক হুমকি’ এবং আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “মার্কিন প্রেসিডেন্টের পোস্ট ‘একটি শত্রুতাপূর্ণ, একতরফা এবং স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ, যা আন্তর্জাতিক আইনের নীতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।”
ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন সামরিক বাহিনী মোতায়েন
ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়ে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিশাল বহর মোতায়েন করেছেন। ট্রাম্পের দাবি, মাদক পাচারের নৌকাগুলো ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে সরাসরি মাদকচক্র পরিচালনার অভিযোগ এনেছেন। তবে মাদুরো অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে কোনো যোগসূত্র থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
২০১৩ সাল থেকে ভেনেজুয়েলার ক্ষমতায় থাকা মাদুরো পাল্টা অভিযোগে বলেছেন, তার সরকারকে উৎখাত করে ভেনেজুয়েলাকে মার্কিন উপনিবেশ বানাতে চায় ওয়াশিংটন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “ভেনেজুয়েলার নাগরিক ও দেশটির সেনাবাহিনী এই ধরনের যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করবে।”
সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনাধীন পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাদুরোকে উৎখাতের চেষ্টা, ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশাল সামরিক বাহিনী গঠন এবং ভেনেজুয়েলার উপকূলে সন্দেহভাজন মাদক নৌযানগুলোতে প্রায় তিন মাস ধরে হামলার পর মার্কিন সেনাবাহিনীর নতুন পর্যায়ের অভিযান শুরু করা। ট্রাম্প দেশটিতে গোপন সিআইএ অভিযানেরও অনুমোদন দিয়েছেন।
ট্রাম্প এই সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বলেছিলেন, সন্দেহভাজন ভেনেজুয়েলার মাদক পাচারকারীদের থামাতে যুক্তরাষ্ট্র ‘খুব শিগগির’ স্থল অভিযান শুরু করবে। ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘ঔপনিবেশিক লক্ষ্য’র অভিযোগ করেছে। রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলার সময় কারাকাসের বাসিন্দারা ট্রাম্পের ঘোষণার সমালোচনা করেছেন। রান্না সহকারী ম্যানুয়েল রোমেরো বলেন, “আমি মনে করি এটি অন্যায়। কারণ মানুষকে কাজে যেতে, ব্যবসা করতে, তাদের পরিবারকে দেখতে ভ্রমণ করতে হয় এবং আমরা ভেনেজুয়েলানরা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী নই।”
আইনজীবী কারমেন ক্যাস্টিলো বলেন, তিনি উদ্বিগ্ন যে ছুটি কাটাতে অনেক মানুষ ভেনেজুয়েলার বাইরে তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা এখানে ভেনেজুয়েলার কারাকাসে বন্দী। ভেনেজুয়েলার সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘অনৈতিক আগ্রাসন’ প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে।
ভেনেজুয়েলার মিত্র ইরান ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং বিশ্বব্যাপী বিমান চলাচলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে নিন্দা করেছে। নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সূত্রের মতে, ভেনেজুয়েলার সরকারি কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নিন্দা করে থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের নাম সরাসরি উল্লেখ করেননি। এর কারণ হতে পারে যে, মাদুরো সরকার হয়তো উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছে।