ক্রাইম রিপোর্টার || ঢাকার মিরপুর থানাধীন একতা রোড, আহম্মদ নগর, পাইকপাড়ার ৩২১/৩ নং বাড়ির ক্রয়সূত্রে মালিক জনৈক হারুন–অর–রশিদ। দীর্ঘ ২০ বছর পূর্ব হইতে হারুন-অর-রশিদ উক্ত বাড়িতে টিনসেড ঘর নির্মাণ করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছে। উক্ত বাড়ির কয়েকটি রুম ভাড়া দিয়ে হারুন-অর-রশিদ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
গত ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর ৭ আগষ্ট রাত আনুমানিক রাত ১২টার সময় ঢাকা মহানগর বিএনপির মিরপুর থানার ১২নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার দিল খায়ের শিপু, তার বাবা বাবুল আক্তার ও ছোট ভাই অয়নের নেতৃত্বে ১৫–২০ জন সন্ত্রাসী হারুন-অর-রশিদের বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে তাকে মারধর করে ও অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সে ও তার স্ত্রীর চোঁখ বেঁধে ফেলে ১৪ মাস বয়সের ছেলে, তিন বছর বয়সের মেয়েসহ একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে ফেলে দিয়ে আসে। উপস্থিত লোকজন তাদের চোঁখের বাঁধ খুলে দিলে তারা দেখতে পান যে কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ডে পড়ে আছেন। সেখান থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে তারা নিকট আত্মীয়ের বাসায় চলে যান।
২৪ এর জুলাই বিপ্লব পরবর্তী থানা পুলিশসহ দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় হারুন-অর-রশিদ সেনা ক্যাম্প, থানা পুলিশে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পান নাই। পরবর্তীতে তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম–মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বরাবর একটি আবেদন করেন এবং আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক জনপ্রিয় নেতা আমিনুল হককে হারুন-অর-রশিদের বসত বাড়িটি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। আমিনুল হক ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ বিষয়টি মিমাংসা ও হারুন-অর-রশিদের বসত বাড়িটি তাকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য বহু চেষ্টা করেন, যা অদ্যবধি চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর বিএনপির মিরপুর থানার ১২নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার দিল খায়ের শিপু দলীয় নেতৃবৃন্দের অনুরোধ অমান্য করায় তাকে দখলকৃত বাড়ির দলিলপত্র জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। সে নির্দিষ্ট সময়ে দলিলপত্র জমা না দেওয়ায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। শাহরিয়ার দিল খায়ের শিপু কোন সদুত্তর দিতে না পারায় তাকে ‘দলীয় নীতি ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ সহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে’ মর্মে বহিষ্কার আদেশ দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক কমিটির উক্ত ইস্পাত কঠিন সিদ্ধান্ত ও শাহরিয়ার দিল খায়ের শিপুকে বহিষ্কারের কারণে ভুক্তভোগী কিছুটা হলেও ন্যায় বিচার পাবে এবং দলের লোভী কর্মীবৃন্দ দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলবে, এলাকার জনগণের কাছে দল ও নেতৃবৃন্দের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে বলে সাধারণ জনগণ মনে করেন।
উল্লেখ্য, দৈনিক প্রথম ডাক পত্রিকার প্রতিবেদক উক্ত বাড়ি দখলের ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে সরেজমিনে গিয়ে জানতে পারেন যে, হারুন-অর-রশিদের একতা রোডের বাড়ি ছাড়াও শিপু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী ঐ এলাকার আরো কয়েকটি বাড়ি ও ফ্ল্যাট ২৪ এর ৫ আগষ্ট পরবর্তীতে জোর পূর্বক অবৈধ দখল করে ভোগদখল করছে, এসব বাড়ি থেকে ভাড়া উত্তোলন করে নিজে ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী লাভবান হচ্ছে, পক্ষান্তরে এলাকাবাসীর কাছে বিএনপির বদনামসহ সুনাম ও ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
সে পাইকপাড়া এলাকার ফুটপাতের দোকানদারদের থেকে দৈনিক চাঁদা উত্তোলন করছে। নিরীহ দোকানদারগণ চাঁদার টাকা দিতে অনিহা প্রকাশ করলে তাদেরকে মারধরসহ বিভিন্ন কায়দায় হয়রানী করা হয়। ঢাকা মহানগর বিএনপির মিরপুর থানার ১২নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার দিল খায়ের শিপু হারুন-অর-রশিদের বাড়িটি দখল করে সেখানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি টাঙ্গিয়ে নিজেকে বড়মাপের নেতা জাহির করে বাড়িতে একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর আড্ডা জমিয়ে প্রতিদিন মাদক সেবন করে এবং সেখান থেকে ভাড়া উত্তোলন করে সে ও তার বাবা বাবুল আক্তারের ফ্ল্যাট ভাড়া পরিশোধ করে থাকে। শাহরিয়ার দিল খায়ের শিপু ও তার হোন্ডা বাহিনীর তান্ডবে এলাকাবাসী সুস্থভাবে রাস্তায় চলাচল ও বসবাস করা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। শিপুর বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নির্মূলে মিরপুর থানা পুলিশ, সেনা বাহিনীর কোন ভূমিকা না দেখে এলাকাবাসীর মনে নানান প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে।