1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Golam Saroar : Golam Saroar
৮ ঘন্টা অবরূদ্ধ কৃবির ২৫১ শিক্ষক - দৈনিক প্রথম ডাক
সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন

৮ ঘন্টা অবরূদ্ধ কৃবির ২৫১ শিক্ষক

বাকৃবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৫৮ বার দেখা হয়েছে
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি)

বাকৃবি প্রতিনিধি || বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ আগস্ট জরুরি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভার পশুপালন, ভেটেরিনারি ও কম্বাইন্ড -এই তিনটি ডিগ্রি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে শিক্ষকদের অবরূদ্ধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

ওইদিন দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে তালা দেন আন্দোলনকারীরা। এতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়াসহ সভায় উপস্থিত বিভিন্ন অনুষদের ২৫১ জন শিক্ষক ভেতরে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে রাত ৮ টার দিকে বহিরাগতরা এসে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে তালা ভেঙে শিক্ষকদের উদ্ধার করেন

অবরুদ্ধঘণ্টায় সেদিন অডিটোরিয়ামের ভেতরে যা ঘটেছিল, সে বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোখলেসুর রহমান এবং উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল।

অধ্যাপক ড. মো. মোখলেছুর রহমান লিখেছেন, “গত ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন এবং ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির মুখে জরুরি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে যে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে, আমি তার একজন সাক্ষী হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। উক্ত অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলটি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং নজিরবিহীন। মিটিংয়ের একেবারে শেষ পর্যায়ে একটি সুন্দর এবং আনন্দঘন পরিবেশ হঠাৎ করেই আতঙ্কে রূপ নেয়। ছাত্ররা মিলনায়তনের সবগুলো গেট তালা বন্ধ করে দেয় এবং মিছিল শুরু করে যে, শুধু কম্বাইন্ড ডিগ্রি ছাড়া অন্য কোনো ডিগ্রি তারা মেনে নেবে না।”

তিনি লেখেন, “রাত ৮টা পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ে ছাত্র ছাত্র-ছাত্রীরা কারো কোন কথাতেই কর্ণপাত করেনি। ছাত্ররা আড়াইশো শিক্ষককে অভুক্ত রেখেছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ ক্ষুধায় এর ওর কাছে বিস্কুট আছে কিনা খোঁজাখুঁজি করেছে, উচ্চ রক্তচাপে এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ সময় মত ওষুধ না পেয়ে একেবারেই নাজেহাল হয়ে পড়েছিলেন।”

তিনি আরো লেখেন, “অনেক মহিলা শিক্ষক ভিতরে আটকা ছিলেন যাদের বাসায় ছোট বাচ্চা ছিলআমি দুজন শিক্ষককে দেখেছি বাসায় তাদের অসুস্থ সন্তান রেখে এসেছিলেন, ভিতরে আটকা পড়ে সন্তানের দুশ্চিন্তায় তারা কাতর ছিলেনকখন কোন ওষুধ খাবে সেটি ফোনে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছিলেনআমাদের আড়াইশো শিক্ষকের পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছিলেন, কখন আমরা বাসায় ফিরে যাব।”

অধ্যাপক মোখলেছুর বলেন, “এমতাবস্থায় সন্ধ্যার পর শিক্ষক সমিতির জরুরি অধিবেশন শুরু হলে আমাদের একজন নারী শিক্ষিকা সেন্সলেস হয়ে পড়ে যান। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সও আসে। কিন্তু ছাত্ররা দরজা খুলে তাকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন এবং সিনিয়র প্রফেসরগণ ছাত্রদের রিকোয়েস্ট করেন তারা যেন আমাদের অসুস্থ প্রফেসরকে হাসপাতালে নেয়ার সুযোগ দেন । ছাত্ররা কারো কথাই শুনছিল না । কি নৈতিক অধঃপতন আমাদের ছাত্রদের!”

অধ্যাপক মোখলেছুর আরো বলেন, “অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল, ওই প্রফেসর অসুস্থ হয়ে মারা গেলেও দরজা খুলে বের করতে দেবে না, যা নিতান্তই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে আমি মনে করি। আমরা ছাত্রদের কাছে জিম্মি ছিলাম। অসুস্থ, সেন্সলেস প্রফেসরকে হাসপাতালে নেওয়ার মত কোনো অধিকার আমাদের ছিল না। অ্যাম্বুলেন্স উপস্থিত ছিল, কিন্তু ছাত্রদের অনুমতি ছিল না। হায় বাংলাদেশের সচেতন ছাত্রসমাজ! এমতাবস্থায় কে বা কারা দক্ষিণ দিকের দরজা ভেঙে আমাদের বের হওয়ার ব্যবস্থা করেন। ভাঙ্গা দরজা দিয়ে আমরা বের হয়ে যাই।”

তিনি মন্তব্য করেন, “ছাত্রদের এই সমস্ত ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ আমাকে দারুণভাবে ব্যথিত করেছে। ছাত্রদের এই ঔদ্ধত্য, শিক্ষকদের প্রতি অবজ্ঞা, অশালীন মুখের ভাষা, আমাদের সব শিক্ষককে দারুণভাবে পীড়া দিয়েছে। বাস্তব সত্য হলো, সারাদিনের খাদ্য এবং পানীয়বিহীন অভুক্ত শিক্ষকগণ গরমে ক্লান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অথচ কোনো মিডিয়াই শিক্ষকদের লাঞ্ছনার বিষয়টি প্রকাশ করছে না। শুধু বলছে, ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আক্রমণ।”

পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, “আমি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে পুরোটা সময় ল্যাপটপ নিয়ে বসে ছিলাম। আমি এবং তাহসিন ফারজানার ১ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় ঢাকায় ফাইনাল প্রোজেক্টের ওয়ার্কশপ ছিল। আমি আবদ্ধ অবস্থায়, স্লাইডগুলো তৈরি করছিলাম; যদিও খুব ক্ষুধার্ত ছিলাম। মনের ভেতরে কষ্ট অনেক । আমি যেটা নিজের চোখে দেখেছি, সেটা লিখেছি। আমরা সেখানে দুপুরে নুডুলস খেয়েছি। নরমালি ২০-৩০ টাকার যে নুডুলস দেয় সেটাই খেয়েছিলাম।”

অপরদিকে, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান মঞ্জিল ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “সভায় সিদ্ধান্ত হয় ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু হবে। একইসঙ্গে আরো কিছু বিষয় বিবেচনা করে দুটি অনুষদের নিজস্ব ডিগ্রিও সীমিত আকারে চালু থাকবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ খবর ছাত্ররা সভা শেষ হওয়ার পূর্বেই জেনে যায় (সম্ভবত তা ছাত্রদের মনঃপুত হয়নি) এবং ছাত্ররা মিলনায়তনের গেটে তালা লাগিয়ে দেয়।”

তিনি লেখেন, “সময় যত গড়িয়েছে, ততই পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন, একজন নারী শিক্ষক পর্যন্ত অজ্ঞান হয়ে যান। তবুও ছাত্রদের মন গলেনি। প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে এই অমানবিক পরিস্থিতি চলতে থাকে। মনে হচ্ছিলশিক্ষকরা যদি অসুস্থ্যতা কিংবা ক্ষুধাতৃষ্ণায় মারা যান, তবুও দাবি না মানলে তারা বের হতে পারবেন না।”

তিনি আরো লেখেন, “সবচেয়ে দুঃখজনক হলোএই অসহায় শিক্ষকদের মুক্ত করতে কোনো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্য ফ্যাকাল্টির ছাত্ররাও তাদের শিক্ষকদের সহায়তায় এগিয়ে আসেননি। অবশেষে তালা ভেঙে শিক্ষকেরা বের হতে পেরেছেনএ যেন শুধু আল্লাহর রহমত ছাড়া কিছু নয়।”

ফেসবুকে পোস্ট বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন তিনি বলেন, “এটি আমার ব্যক্তিগত অভিমত। আমি শুধু ভেতরকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছি। খারাপ লাগে আমাদের ছাত্ররা আমাদের বিরুদ্ধে যখন যায়।”

দরজা খুলে দেওয়ার বিষয়ে এ অধ্যাপক বলেন, “আমার এ বিষয়ে স্পষ্ট জানা নেই, কে খুলেছে । প্রশাসনের বিবৃতি অনুসারে বলা হয়েছে, তাদের আত্মীয় স্বজনরা দরজা খুলেছে। আমার মনে হয় প্রশাসনের বক্তব্য বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”

ওইদিন কি ঘটেছিল জানতে চাইলে পশুপালন অনুষদের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শিবলী সাদী বলেন, “দুপুর বেলাও নারী শিক্ষকসহ যাদের ইমারজেন্সি সমস্যা, তাদের বাহিরে বের করার ব্যবস্থা করা হয়। দুপুরে অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিভাগের মুক্তা ম্যাম, হাফিজা ম্যাম, ফার্মাকোলজি বিভাগের ফাতেমা ম্যাম, ফিজিওলজি বিভাগের শারমিন ম্যাম এবং পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনিস্টিটিউটের বাতেন স্যারকে বাইরে বের করা হয়। পাশাপাশি ইমারজেন্সি সমস্যা হলে দ্রুত সলভ করার জন্য আমরা নিজেরাই গেটে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসি।”

তিনি বলেন, “আর সন্ধ্যার সময় একজন ম্যাম অসুস্থ হওয়ায় ওনাকে বাইরে আনার জন্য চাবি নিয়ে আমরা গেটে উপস্থিত হই। তখন এসপি স্যারও উপস্থিত ছিলেন। ঠিক তখনই পিছনের গেট ভাঙা বা তালা খোলার ব্যবস্থা করা হয়। ওই গেট দিয়ে তখন প্রায় সব শিক্ষক বের হয়।”

খাবারের বিষয়ে ওই শিক্ষার্থী বলেন, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে অডিটোরিয়ামের ভিতরে স্যারদের জন্য পর্যাপ্ত পানির বোতল ও শুকনো খাবার সরবারহ করা হয়েছিল।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed By: SISA IT