আন্তর্জাতিক ডেস্ক || যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলা থেকে আসা একটি মাদকবাহী নৌকায় হামলা চালিয়ে ১১ জন ‘মাদক সন্ত্রাসীকে’ হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার প্রশাসন সম্প্রতি দক্ষিণ ক্যারিবিয়ানে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করার পর এটিই প্রথম হামলা। খবর বিবিসির।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে ট্রাম্প বলেন, মঙ্গলবারের মার্কিন সামরিক অভিযানে ভেনেজুয়েলার গ্যাং ট্রেন দে আরাগুয়ার সদস্যদের লক্ষ্য করা হয়েছে।
ট্রাম্পের দাবি, নৌকাটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় ছিল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ মাদক পরিবহন করছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে সামরিক ও রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়েছে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র মাদুরোকে গ্রেপ্তারের জন্য তথ্য দিলে ৫০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এদিকে মাদুরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলা মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “আমরা ভেনেজুয়েলা থেকে আসা একটি মাদকবাহী নৌকা ধ্বংস করেছি। এতে অনেক পরিমাণে মাদক ছিল।”
ট্রাম্প আরো জানান, জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন তাকে ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
পরবর্তীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্টে বলেন, “আজ সকালে, আমার নির্দেশে, মার্কিন সামরিক বাহিনী সাউথকম এলাকায় ইতিবাচকভাবে চিহ্নিত ট্রেন ডি আরাগুয়ার মাদক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি গতিশীল হামলা চালিয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “এই হামলায় ১১ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। কোনো মার্কিন সেনা হতাহত হয়নি। দয়া করে এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাদক আনার কথা ভাবছেন এমন যে কেউ সতর্ক হোন। সাবধান!”
ট্রাম্প তার পোস্টের সঙ্গে একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে ড্রোন থেকে তোলা ফুটেজে একটি দ্রুতগামী নৌকা বিস্ফোরিত হয়ে আগুনে পুড়ে যেতে দেখা যায়।
এ ধরনের নৌকা সাধারণত আটক করা হয় ও ক্রুদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু এবার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো নৌকাটি ধ্বংস করা হয়েছে- যা সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানের ধরনকে মনে করিয়ে দেয়, যেমনটি আল-কায়েদার বিরুদ্ধে দেখা গিয়েছিল।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে, ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি মাদক পাচারকারী সংগঠন ও অপরাধী গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার ট্রেন দে আরাগুয়া এবং কার্টেল অব দ্য সানস, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মাদুরো ও তার ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা পরিচালনা করে। তবে কারাকাস সরকার এটি অস্বীকার করে আসছে।
গত দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ক্যারিবিয়ানে ৭টি যুদ্ধজাহাজ এবং একটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করেছে। এতে রয়েছে ৪,৫০০ জনের বেশি নৌসেনা ও মেরিন। জাহাজগুলোতে হেলিকপ্টার ও টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সুবিধা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পি-এইট গোয়েন্দা বিমান এলাকায় টহল দিচ্ছে ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় নজরদারি চালাচ্ছে।
ট্রাম্প বলেছেন, “এই হামলার মধ্যেই শেষ নয়। এরকম আরো অভিযান চালানো হবে।”
ভেনেজুয়েলার সরকার মার্কিন বাহিনী মোতায়েনের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সোমবার মাদুরো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি সামরিক হামলা চালায় তবে ভেনেজুয়েলা ‘অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ’ করবে।