গাজীপুর প্রতিনিধি || গাজীপুরের শ্রীপুরে পরকীয়া প্রেমের অভিযোগ তুলে ওবায়দুল্লাহ (৩২) নামে এক যুবককে টেঁটা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীর ভাষ্য, নির্যাতনকারীরা তার কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পুরো টাকা না দেওয়ায় তার মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয় তারা।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভুক্তভোগী শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। গত শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের পাবুরিয়ারচালা গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। ভুক্তভোগী ওবায়দুল্লাহ একই গ্রামের মৃত শহিদুল্লাহর ছেলে এবং পেশায় মুদি দোকানী।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওবায়দুল্লাহ গ্যাস সিলিন্ডার আনতে পাশের বাজারে যাচ্ছিলেন। এ সময় অভিযুক্ত মো. রেজাউল করিম (৪৫), শহিদ মিয়া (৪৫), সজীব (২০) ও সিয়াম (২০) তাকে ধরে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে তাকে নির্যাতন করা হয়। এসময় অভিযুক্তরা তার কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ওবায়দুল্লাহ বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমি গ্যাস সিলিন্ডার আনতে পায়ে হেঁটে পাশের বাজারে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ অভিযুক্তরা এসে আমাকে ঝাপটে ধরে পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে তারা এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে এবং বলতে থাকে- তুই অমুক নারীর সঙ্গে পরকীয়া করছিস, সে আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “এরপর লোহার রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে আমার মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলে নির্যাতন চালায়। মাছ ধরার টেঁটা দিয়ে খুঁচিয়ে আমার দুই পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে তারা। এমনকি ধারালো ছুরিও ব্যবহার করে আমাকে গুরুতরভাবে জখম করা হয়।”
ওবায়দুল্লাহ বলেন, “একপর্যায়ে নির্যাতনকারীরা এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। স্বজনদের ফোন করলে আমার বৃদ্ধ মা ও ছেলে ঘটনাস্থলে আসে। তাদের সামনেই আমাকে আবারো টেঁটা দিয়ে আঘাত করা হয়। এরপর মাকে জিম্মি করে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। মা ১০ হাজার টাকা জোগাড় করে অভিযুক্ত শহিদ মিয়ার হাতে তুলে দেন। বাকি টাকার জন্য তারা আমার মোটরসাইকেল নিয়ে যায় এবং অলিখিত তিনটি জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে আমার স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। ওরা সবাই এলাকায় পরিচিত মাদক কারবারি।”
ভুক্তভোগীর মা ফরিদা বেগম বলেন, ‘‘আমার সামনেই ছেলেকে মুখ বেঁধে টেঁটা দিয়ে খুঁচিয়েছে। ওদের থামাতে পারিনি। শেষে টাকা ও মোটরসাইকেল নিয়ে ছেলেকে ফেলে যায়। শরীরে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আঘাত করা হয়নি।’’
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রেজাউল করিমের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল বারিক বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। দ্রুত মোটরসাইকেল উদ্ধারের পাশাপাশি আইনগত সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’