আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নেপালে তরুণ প্রজন্মের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ ও দুর্নীতির প্রতিবাদে গতকাল সোমবার বিক্ষোভ চলাকালীন ১৯ জন নিহত হওয়ার পর মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
কেপি শর্মা ওলি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, চলমান সংকটের সংবিধানসম্মত সমাধানের পথ সুগম করার জন্য তিনি পদত্যাগ করেছেন।
গতকাল সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী কাঠমান্ডু সহ অনেক শহরে হাজার হাজার তরুণ রাস্তায় নেমে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। আন্দোলন ধীরে ধীরে সহিংস হয়ে ওঠে, যার ফলে কমপক্ষে ১৯ জন প্রাণ হারান এবং ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন।
পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে শুরু করলে, সোমবার গভীর রাতে নেপাল সরকার সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তবে পুলিশের গুলিতে প্রাণহাণির ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ কমেনি। নেপাল সরকার কাঠমান্ডু সহ ৩টি জেলায় কারফিউ জারি করার পরও মঙ্গলবার ভোর থেকে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ সারা নেপালে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। এ সময় উত্তেজিত জনতা একাধিক প্রভাবশালী নেতার বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। আক্রমণের শিকার হয় ওলি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার বাসভবনও। রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়ও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
এদিকে চলমান বিক্ষোভে সরকারি দমন-পীড়নের প্রতিবাদে নেপালের পানি সরবরাহ মন্ত্রী প্রদীপ যাদব মঙ্গলবার সকালে পদত্যাগ করেন। তার আগে পদত্যাগ করেন কৃষি ও পশুপালন উন্নয়ন মন্ত্রী রামনাথ অধিকারী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক। গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর পদত্যাগে তীব্র চাপের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী ওলির জোট সরকার।
সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, মঙ্গলবার নেপালের রাজনৈতিক সংকট আরো তীব্র হয়ে ওঠে যখন তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভের মধ্যে সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগডেল প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিকে পদত্যাগ করতে বলেন।
সেনাপ্রধানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথোপকথনের সাথে পরিচিত কর্মকর্তাদের মতে, ওলি সেনাপ্রধানকে পরিস্থিতি মোকাবিলার অনুরোধ করেন। তবে জেনারেল সিগডেল প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ওলি ক্ষমতা ছেড়ে দিলেই কেবল সেনাবাহিনী দেশকে স্থিতিশীল করতে পারবে।
সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়া টুডে আরো জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ওলি বালুওয়াতারে তার সরকারি বাসভবন থেকে নিরাপদে বেরিয়ে আসার জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তাও চেয়েছেন এবং দেশ ত্যাগের জন্য সাহায্য চেয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, ওলি চিকিৎসার অজুহাতে দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, বেসরকারি বিমান সংস্থা হিমালয় এয়ারলাইন্সকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।