কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || “ভোটের সময় এলেই মেম্বার-চেয়ারম্যানরা বলে, রাস্তা করে দেবো। কিন্তু ভোটের পরে আর খোঁজ নেয় না। ভোট আসে ভোট যায় কিন্তু রাস্তা হয় না। গাড়ি-ঘোড়া উল্টে যাচ্ছে, অ্যাক্সিডেন্ট হচ্ছে। মানুষ কত কষ্ট করে যাওয়া আসা করে তার কোনো হিসেব নেই। রাস্তা এত খারাপ যে, ভ্যানের ওপরই প্রসুতি মায়ের ডেলিভারি হয়ে যায়।”
মনে কষ্ট ও অভিমান নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সোঁপুকুরিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন।
ফিরোজার স্বামী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘৭০ বছর ধরে রাস্তা খারাপ। কোথাও পাড় ভাঙা, কোন কোন জায়গায় গর্ত রয়েছে। বৃষ্টি হলে চলাই যায় না। রোগী, ছাওয়াল পাল নিয়ে কষ্টের শ্যাষ নাই। রাস্তাডা পাকা হলেই ভালো হতো।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সোঁপুকুরিয়া মসজিদ মোড় থেকে কাশেমের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক। সড়কের দুই পাশে কয়েকশ’ পরিবারের বসবাস। তবে গত ৭০ বছরেও সড়কটি পাকাকরণ হয়নি। প্রায় ২০ বছর আগে স্থানীয় এক চেয়ারম্যান ইট দিয়ে এইচবিবি (হেরিংবন্ড) করেছিলেন। তবে সংস্কারের অভাবে সড়কজুড়েই খানাখন্দে ভরা। কোথাও ভেঙে গেছে পাড়।
অতিরিক্ত ভাড়ায় ভ্যান চললেও যেতে চায় না অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য যানবাহন। এতে নানা বয়সী শত শত মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
গ্রামের বাসিন্দা আবুল প্রামাণিক বলেন, ‘‘ভালো মানুষই চলতে পারে না। আর আমিতো শারীরিক প্রতিবন্ধী। কষ্টের কথা বলার জায়গা নেই। ভোটের সময় নেতারা আসে। প্রতিশ্রুতি দেয় রাস্তা করে দেবো। ভোট গেলে আর কেউ খোঁজ নেয় না।”
ফারজানা আক্তার নামের একজন গৃহবধূ বলেন, ‘‘বিয়ের পর ৪০ বছর ধরে দেখছি একই রকম রাস্তা। আপদে-বিপদে একটা ভ্যানও আসতে চায় না। বিয়ের গাড়ি পর্যন্ত উল্টে গেছে এই রাস্তায়। আশপাশের সব রাস্তা পাকা কিন্তু এইডা পাকা হয় না।”
নবম শ্রেণির ছাত্রী রায়শা রহমান বলে, ‘‘উঁচু-নিচু সড়কে ঝাঁকুনি আর ঝাঁকুনি। বৃষ্টির সময় কাদা-পানি জমে থাকে। দুর্ঘটনা ঘটে, পোশাক নষ্ট হয়। দ্রুত রাস্তাটি কার্পেটিং করার দাবি জানাই।”
গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব আলম মুকুল বলেন, ‘‘মসজিদ মোড় থেকে কাশেমের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার জরাজীর্ণ সড়ক। এটি দিয়ে ৩০০-৪০০ পরিবারের লোকজন ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছে।”
তবে বরাদ্দের অভাবে সড়কটি এতদিনেও পাকাকরণ হয়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হক। তিনি বলেন, “পাকাকরণের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, “জনদুর্ভোগ কমাতে ও জনস্বার্থে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়কটি পাকাকরণ করা হবে।”