আন্তর্জাতিক ডেস্ক || ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার স্ত্রী ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। এই সফরে রাজকীয় আড়ম্বর, বাণিজ্য আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি সবকিছুই থাকবে। খবর বিবিসির।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এয়ার ফোর্স ওয়ানে যাত্রা শুরুর আগে ট্রাম্প সফরটিকে সম্মানের বিষয় হিসেবে বর্ণনা করেন এবং বলেন, “যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো।” তিনি আরো বলেন, “তারা দেখতে চায় বাণিজ্য চুক্তিটা আরো একটু পরিমার্জন করা যায় কিনা। আমি এতে সহায়তা করতে প্রস্তুত।”
সফরের শুরুতেই কয়েক বিলিয়ন ডলারের মার্কিন প্রযুক্তি বিনিয়োগ চুক্তি ঘোষণা করা হয়। তবে ট্রাম্প জানান, সফরের মূল উদ্দেশ্য তার ‘বন্ধু’ কিং চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ। তিনি বলেন, “তিনি দেশটিকে অসাধারণভাবে প্রতিনিধিত্ব করেন, তিনি একজন ভদ্রলোক।”
স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে অবতরণের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপারসহ একাধিক কর্মকর্তা তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান।
মঙ্গলবার রাতে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবন উইনফিল্ড হাউসে অবস্থান করেন। বুধবারের কর্মসূচিতে রয়েছে রাজকীয় আনুষ্ঠানিকতা-উইন্ডসর ক্যাসেলে জমকালো আয়োজন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উইন্ডসরকে বর্ণনা করেন চূড়ান্ত ও শ্রেষ্ঠ আয়োজনের স্থান হিসেবে।
তাকে স্বাগত জানাবেন কিং চার্লসসহ জ্যেষ্ঠ রাজপরিবারের সদস্যরা। ফাস্ট লেডি ক্যামিলাও সেখানে উপস্থিত থাকবেন, যদিও সাইনোসাইটিসে আক্রান্ত থাকায় তিনি মঙ্গলবার কেন্টের ডাচেসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যেতে পারেননি। প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্সেস ক্যাথারিনও থাকবেন আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনায়। সেখানে গার্ড অব অনার, সামরিক কুচকাওয়াজ এবং ফার্স্ট লেডি মেলানিয়ার সঙ্গে উইন্ডসর এস্টেটের ভেতরে রথযাত্রাও থাকবে।
রাজকীয় এই আয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেই সাজানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে উইনফিল্ড হাউসে রাজপরিবার প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “রাজা দীর্ঘদিন ধরে আমার বন্ধু। সবাই তাকে সম্মান করে, ভালোবাসে।”
যুক্তরাজ্য নিয়ে তার অনুভূতি প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “এখানে অনেক কিছু আছে যা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আমি বলতে চাই, এটি আমার কাছে খুবই বিশেষ একটি জায়গা।”
যুক্তরাজ্য সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হবে ন্যাটোর প্রতি ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখতে এবং ইউক্রেনকে সমর্থন করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উৎসাহিত করা।
রাষ্ট্রীয় সফরের অংশ হিসেবে বুধবার ট্রাম্পকে রাজকীয় সালাম জানানো হবে উইন্ডসর ও লন্ডনের টাওয়ারে। সেনাবাহিনী, রাজকীয় নৌবাহিনী এবং আরএএফ থেকে ১ হাজার ৩০০ জন সেনা পুরুষ ও নারী এই স্বাগত অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন, যা যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য সর্বকালের বৃহত্তম গার্ড অব অনার হতে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় সফরের কেন্দ্রবিন্দু হবে সেন্ট জর্জ হলে দর্শনীয় ভোজ, যেখানে রাজা চার্লস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বক্তব্য রাখবেন।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এবারের সফরে পারমাণবিক শক্তির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও স্টারমার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি গ্রামীণ বাসভবনে বৈঠক করবেন। সেখানে উভয় দেশের বিখ্যাত কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারও যোগ দেবেন। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেনসেন হুয়াং এবং ওপেনএআই এর স্যাম অল্টম্যান অন্যতম। ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।