আন্তর্জাতিক ডেস্ক || ডেনমার্কের উত্তরাঞ্চলীয় জুটল্যান্ড অঞ্চলে অবস্থিত আলবর্গ বিমানবন্দর ‘অজ্ঞাত’ ড্রোন দেখা যাওয়ায় সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই বিমানবন্দর থেকে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের পাশাপাশি সামরিক উড়োজাহাজও পরিচালিত হয়।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
ডেনিশ পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আলবর্গ বিমানবন্দরের আকাশে একাধিক ড্রোন দেখা যায় এবং কয়েক ঘণ্টা ধরে সেগুলো টহল দেয়। ড্রোনগুলোর আলো জ্বালানো ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোকন্ট্রোল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা (জিএমটি) পর্যন্ত আলবর্গ বিমানবন্দরে সব ধরনের আগমন ও প্রস্থান বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে সকালে পুলিশ জানায়, ড্রোন সরে যাওয়ার পর বিমানবন্দর পুনরায় চালু করা হয়।
এদিকে, একই সময়ে এসবিয়ার্গ, সোন্ডারবর্গ ও স্ক্রিডস্ট্রুপ শহরের বিমানবন্দর ঘিরেও ড্রোন দেখা গেছে। স্ক্রিডস্ট্রুপ ঘাঁটিই হলো ডেনমার্কের এফ-১৬ ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানগুলোর প্রধান ঘাঁটি।
এই ঘটনার কয়েক দিন আগে, দেশটির কোপেনহেগেনের কাস্ট্রপ বিমানবন্দরও ড্রোনের কারণে কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল।
ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেন এটিকে ‘এখন পর্যন্ত ডেনিশ অবকাঠামোর ওপর সবচেয়ে গুরুতর হামলা’ বলে বর্ণনা করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা ড্রোনগুলো উড়তে দেখলেও, কারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তাদের উদ্দেশ্য কী তা এখনো নিশ্চিত নয়। তারা এই কার্যকলাপকে নিছক কৌতুক বলে উড়িয়ে দেননি।
ডেনিশ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা পুলিশকে তদন্তে সহায়তা করছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হয়নি তারা।
ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রয়োজনে ড্রোনগুলো গুলি করে ভূপাতিত করার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। কিন্তু আবাসিক এলাকায়, বিশেষ করে বিমানবন্দরের আশেপাশে যেখানে জ্বালানি ট্যাঙ্ক ও ট্রাক থাকতে পারে, সেখানে এটি বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
ডেনিশ প্রধানমন্ত্রীর ধারণা, এর পেছনে রাশিয়া থাকতে পারে। তিনি বলেন, “এটি সেই সময়কে প্রতিফলিত করে, যেখানে আমরা বাস করি এবং একটি সমাজ হিসেবে আমাদের কী ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে!”
তবে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন। তার দাবি, রাশিয়ার বিমান সবসময় আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে পরিচালিত হয়, তাই কোনোভাবেই আকাশসীমা লঙ্ঘন করে না।
ডেনমার্কের পাশাপাশি নরওয়েও ড্রোন শনাক্ত হওয়ার কারণে সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানী অসলো বিমানবন্দরের আকাশসীমা তিন ঘণ্টা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। এর আগে এ মাসের শুরুতে পোল্যান্ড রাশিয়ার ড্রোন অনুপ্রবেশের পর ওয়ারশসহ চারটি বিমানবন্দর বন্ধ রেখেছিল।
গত ৯-১০ সেপ্টেম্বর রাতে প্রায় ২০টি রাশিয়ান ড্রোন পোল্যান্ডে প্রবেশ করে। আরেকটি রোমানিয়ায় প্রবেশ করে এবং রাশিয়ান মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান এস্তোনিয়ান আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করে। সাম্প্রতিক অতীতে, জার্মানি এবং সুইডেনের আকাশেও সন্দেহজনক ড্রোন দেখা গেছে।
এসব ঘটনার পর ন্যাটো মিত্ররা সীমান্ত প্রতিরক্ষা জোরদারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং নতুন করে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।