নিজস্ব প্রতিবেদক || অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় চিরচেনা এফডিসি থেকে বিদায় নিলেন শিল্পনির্দেশকের সহকারী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। প্রায় ৪৭ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আয়োজন করা হয় তার বিদায় অনুষ্ঠান।
এফডিসির প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে ভাসেন খোরশেদ আলম। গুণী নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুকে জড়িয়ে ধরে তিনি কেঁদে ফেলেন। কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে তার কথায়। তিনি বলেন, “সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। এ আয়োজনের ঋণ শরীরের সব রক্ত দিয়েও শোধ হবে না। এফডিসি আগের মতো ভালো দিনে ফিরে যাক—এই কামনা করি।”
নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, “খোরশেদের সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বহু সিনেমায় সে কাজ করেছে। কর্মজীবন শেষে পরিবারের কাছে ফেরা আনন্দের বিষয় হলেও, তার বিদায় আমাদের জন্য আবেগঘন।”
চিত্রনায়িকা রুমানা ইসলাম মুক্তি যোগ করেন, “প্রায় অর্ধশতাব্দীর কর্মজীবন! খোরশেদ মামা বিদায়ের দিনে কেঁদেছেন, আমাদেরও কাঁদিয়েছেন। পরিবার নিয়ে বাকি জীবনটা ভালো কাটুক—এই দোয়া করি।”
অভিনেত্রী ইয়ামিন হক ববি বলেন, “যদিও আমি অল্প সময় তাকে পেয়েছি, কিন্তু তার আন্তরিকতা ভোলার নয়। বিদায় বেদনার হলেও আমি চাই এই বিদায় হোক সুখকর।”
শিল্পকর্মীর পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রযোজক-নেতা খোরশেদ আলম খসরু, ফরমান আলী, বাংলাদেশ পরিচালক সমিতি, ফিল্ম ক্লাব, রুমানা ইসলাম মুক্তি, ইয়ামিন হক ববি, জায়েদ খান, আর্ট ডিরেক্টর ফরিদ, প্রযোজক-নায়ক মাহবুবুর রশিদ মুন্না, প্রযোজক শাহরিন সুমি, জুয়েল, সনি রহমান, ওমর মালিক, সৈকত নাসির, বাসুদেব, রাজ রিপা, মিশা সওদাগর, ডি এ তায়েব, রিপন খানসহ অনেকেই।
এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন এফ আই মানিক, ওয়াকিল আহমেদ, মুক্তি, ইয়ামিন হক ববি, কমল পাটেকর, সনি রহমান, নৃত্যপরিচালক ইউসুফ খান ও এফডিসির এমডি মাসুমা রহমান তানি।
বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন চলচ্চিত্র সাংবাদিক মাজহার বাবু, আহমেদ তেপান্তর, রাহাত সাইফুল, রঞ্জু সরকার, এ এইচ মুরাদ, আসিফ আলম, রুহুল আমিন ভূঁইয়া, নির্মাতা গাজী মাহবুব ও সায়মন তারিক।
মাজহার বাবু বলেন, “খোরশেদ ভাই সহায়তা চেয়েছিলেন। অল্প সময়ে আমরা প্রায় ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছি। যারা সহযোগিতা করেছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।”
এফডিসির আলো-আঁধারি ভরা স্মৃতিগুলো পেছনে ফেলে, শারীরিকভাবে অসুস্থ খোরশেদ আলম এবার ফিরে যাচ্ছেন চাঁদপুরের ভবানীপুর গ্রামে। সেখানেই জীবনের বাকি দিনগুলো কাটাবেন।
উল্লেখ, এর আগেও একইভাবে চলচ্চিত্র সাংবাদিকরা বিদায় জানিয়েছিলেন এফডিসির প্রিয় মুখ ঝালমুড়ি বিক্রেতা প্রয়াত আব্দুল মান্নান মোল্লাকে। ১৯৭২ সাল থেকে চলচ্চিত্রপাড়ায় ঝালমুড়ি বিক্রি করা মান্নানকে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ‘মুড়ি উৎসব’-এর মাধ্যমে বিদায় দেয়া হয়েছিল।