খেলাধুলা ডেস্ক || ১৯৮৪ সাল থেকে এশিয়া কাপ হয়ে আসছে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ১৭তম এশিয়া কাপ চলছে। অথচ মহাদেশীয় এই প্রতিযোগিতায় ভারত-পাকিস্তানের ফাইনাল হয়নি একবারও। ১৭তম এশিয়া কাপে এসে সেই অপেক্ষা ফুরিয়েছে। দুবাইয়ে আজ রাতেই শিরোপার লড়াইয়ে মাঠে নামবে।
দুই দল এখন পর্যন্ত ২১০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে সব ফরম্যাটে। কিন্তু প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলা হয়েছে খুব কম। ৪০ বছরের ইতিহাসে মাত্র পাঁচবার যেকোন টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে ভারত ও পাকিস্তান। সেই কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দলের ফাইনালের লড়াইটা আজ ভিন্নমাত্রা যোগ করছে। আগের পাঁচ ফাইনালের ছোট গল্পই আজ শোনানো যাক,
পঁচাশির বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মেলবোর্নের ফাইনাল মনে আছে নিশ্চয়। ৫০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে এক তরফা ফাইনালে ভারত পাকিস্তানকে হারিয়েছিল। ৯ উইকেটে ১৭৬ রানে গুটিয়ে যায় ইমরান খানের দল। জবাবে ক্রিস শ্রীকান্থের ৬৭ ও রবি শাস্ত্রীর ৬৩ রানে ৮ উইকেটে ম্যাচ যেতে ভারত। শাস্ত্রী জিতে নেন চ্যাম্পিয়নস অব চ্যাম্পিয়নস খেতাব। পেয়ে যান অডি গাড়ি। তেরাশির বিশ্বকাপ জেতার পরও ভারত অসাধারণ খেলতে থাকে।
ঠিক তার পরের বছরই পাকিস্তান বদলা নেয়। কিন্তু সেই বদলায় ছিল চরম নাটকীয়তা। জাবেদ মিয়াদাদের শেষ বলে ছক্কা ইতিহাসের অনন্য এক পাতায় লেখা রয়েছে। শেষ উইকেটে শেষ বলে যখন ৪ রান লাগতো পাকিস্তানের, তখন চেতন শর্মার লো ফুলটস বল মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা হাঁকান মিয়াদাদ। এরপর তার মুষ্টিবদ্ধ হাতের শূন্য ছোড়া ঘুষি জয়ের প্রতীক হয়েছিল অনেকদিন। ১১৬ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ জিতিয়েছিলেন কিংবদন্তি মিয়াদাদ।
আট বছর পর আরেকটি অস্ট্রাল-এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের আরেকটি করুণ পরাজয়। তখন শারজাহ ছিল পাকিস্তানের পয়মন্ত ভেনু। যাকে তাকে বলে কয়ে হারিয়ে দিতে পারে। ভারতও তখন প্রতিপক্ষ হিসেবে দারুণ। কিন্তু শারজাহ আর পাকিস্তানের যে রসায়ন সেখানে তাদের হার মানতেই হয়। পাকিস্তান আগে ব্যাটিং করে ২৫০ রান করে। ভারত ২১১ রানে থেমে যায়। আমির সোহেল এই ম্যাচে ছিলেন পুরোপুরি লাইমলাইটে। প্রথমে ব্যাটিংয়ে ৮৭ বলে ৬৯ রান করেন, বোলিংয়ে ২২ রানে ২ উইকেট এবং ফিল্ডিংয়ে ২ ক্যাচ। যেখানে শচীন টেন্ডুলকারের দুর্দান্ত এক ক্যাচও নিয়েছিলেন। ২৭৪ রান করে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার।
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল এখনো ক্রিকেট প্রেমীদের চোখে ভেসে বেড়ায়। ভারত ও পাকিস্তানের ঐতিহাসিক ফাইনাল ম্যাচটি এতটা রোমাঞ্চ ছড়াবে কেউ ভাবতেও পারেনি। বলা হয়ে থাকে, ভারতের ওই ম্যাচে শিরোপা জয়ের মধ্যে দিয়ে ক্রিকেটের আমূল পরিবর্তন আসে।
ম্যাচ তখন পুরোপুরি পাকিস্তানের পক্ষে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন কেবলমাত্র ১৩ রান। যোগিন্দর শর্মার প্রথম বল ওয়াইড হওয়ার পর দ্বিতীয় বলে মিসবাহ উল হক ছক্কা উড়ান। মহেন্দ্র সিং ধোনি সময় নিয়ে ফিল্ডিং সাজিয়ে ব্যাটসম্যানকে ভোড়কে দেন। পথ ভুলে মিসবাহ ফাইন লেগে ক্যাচ দেন শ্রীশান্তকে। ব্যাস, ওখানেই ভারতের শিরোপা জয়। প্রথমবারের মতো আয়োজিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে ভারত। সেটাও চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে।
আইসিসি ইভেন্টে পাকিস্তান ভারতকে হারাতে পারে না, বছরের পর বছর এই কালিমা গায়ে মাখিয়ে রেখেছিল পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেই অপবাদ থেকে মুক্তি পায় পাকিস্তান। ফখর জামানের সেঞ্চুরি ও মোহাম্মদ আমিরের বিস্ময়কর এক বোলিং স্পেলে স্রেফ নাস্তানাবুদ ভারত৷ ফাইনালের মঞ্চে ১৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে ভারতকে হারিয়ে পাকিস্তান জেতে শিরোপা।
আজ আরেকটি ফাইনালে দাঁড়িয়ে দুই দল। এশিয়া কাপে এবার দুই দল দুইবার মুখোমুখি হয়েছিল। ভারত হেসে খেলে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল। পাকিস্তান কি এবার বদলা নিতে পারবে, নাকি ফেভারিট হিসেবে ভারতই নেবে শিরোপা।