খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি || খাগড়াছড়িতে গুইমারা উপজেলায় পাহাড়ি কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ ও সহিংসতার মধ্যে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) গুলিতে নিহত তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা সবাই খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার বাসিন্দা।
জেলা সিভিল সার্জন মো. ছাবের জানান, নিহত ব্যক্তিরা হলেন— উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের আথ্রাউ মারমা (২৪), লিচুবাগান এলাকার আথুইপ্রু মারমা (২৬) ও বটতলাপাড়ার থোয়াইচিং মারমা (২৪)।
জেলা সিভিল সার্জন আরো জানান, নিহতদের লাশ হাসপাতালের মর্গে আছে। আইনি প্রক্রিয়ায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত ২৩ সেপেম্বর রাত ৯টায় গুইমারা উপজেলায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় ক্ষেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শয়ন শীল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’-এর ব্যানারে ডাকা অবরোধের মধ্যে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্র পরিণত হয় খাগড়াছড়ির গুইমারার রামেসু বাজার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছিল স্থানীয় একটি পক্ষ। এ সময় গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ‘‘গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত উঁচু পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ (মূল) সশস্ত্র দলের সদস্যরা ৪/৫ বার অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত পাহাড়ি, বাঙালি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে আনুমানিক ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে সংঘর্ষে লিপ্ত এলাকাবাসীর মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়।’’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে পাহাড়ি দুর্বৃত্তের গুলিতে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য জানান হয়েছে।
এদিকে, ধর্ষণ ঘটনার প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতার অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ চলছে। তবে বেলা ১২টা থেকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কে অবরোধ শিথিল করেছে সংগঠনটি। ফলে দুরপাল্লার গাড়ি ছেড়ে গেছে।
জুম্ম ছাত্র-জনতার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, দুপুর ১২টা থেকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও ঢাকা-খাগড়াছড়ি সড়কে অবরোধ শিথিল করা হয়েছে। জানতে চাইলে জুম্ম ছাত্র-জনতার এক মুখপাত্র বলেন, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা এবং নিহত ব্যক্তিদের সৎকারের সুবিধার্থে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দুই সড়কে অবরোধ শিথিল থাকবে।
খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় প্রশাসনের আহূত ১৪৪ ধারা এখনো বহাল রয়েছে। আগের মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। সেনাবাহিনীর টহলের পাশাপাশি বিজিবি, পুলিশ মাঠে রয়েছে।
পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানান, উদ্ভুত অবস্থা ক্রমে উন্নতির দিকে। আজ সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। সময়মতো ১৪৪ ধারাও তুলে নেওয়া হবে।