আন্তর্জাতিক ডেস্ক || যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ডে আগামী দুই মাসের জন্য ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর বিবিসির।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথের পাঠানো এক স্মারকে বলা হয়, পোর্টল্যান্ড শহর-যেখানে বিক্ষোভ চলছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে ‘ফেডারেল সম্পত্তি রক্ষার জন্য’ কমপক্ষে ২০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হবে।
গত শনিবার ট্রাম্প জানান, অবৈধ অভিবাসী আটক কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্য করে বিক্ষোভ দমাতে প্রয়োজনে ‘পূর্ণ শক্তি’ ব্যবহারের অনুমোদন তিনি দিয়েছেন।
এর পরপরই ওরেগন রাজ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, এই মোতায়েন ‘অবৈধ’ এবং ‘উস্কানিমূলক’। রবিবার ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ওরেগনের অ্যাটর্নি জেনারেল ড্যান রেফিল্ডের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপ ‘জননিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং উত্তেজনা বাড়াবে’।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই পদক্ষেপে অ্যান্টিফা এবং অন্যান্য দেশীয় সন্ত্রাসীদের আক্রমণের মুখে থাকা আমাদের যে কোনো আইসিই (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) স্থাপনাকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। তিনি পোর্টল্যান্ডকে ‘যুদ্ধ বিধ্বস্ত শহর’ বলে অভিহিত করেছেন।
ওরেগনের ডেমোক্র্যাট আইন প্রণেতারা ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলেছেন, শহরে সেনা মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন নেই।
ওরেগনের গভর্নর টিনা কোটেক বলেন, “পোর্টল্যান্ডে কোনো জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি নেই। আমাদের সম্প্রদায় শান্ত ও নিরাপদ। যেকোনো মোতায়েন ক্ষমতার অপব্যবহার হবে।”
সিনেটর রন ওয়াইডেন সতর্ক করে বলেন, “ট্রাম্প ২০২০ সালের পরিস্থিতি আবার সৃষ্টি করতে চাইছেন।”
ওরেগনের ডেমোক্র্যাট নেতারা একযোগে ট্রাম্পের পদক্ষেপের বিরোধিতা করলেও, রিপাবলিকানদের একটি অংশ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। শ্রম মন্ত্রী লরি চাভেজ-ডি-রেমার বলেছেন, “আইনের শাসন ভেঙে পড়ে পোর্টল্যান্ড একটি অপরাধপ্রবণ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।”
বিবিসি জানিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে পোর্টল্যান্ডের দক্ষিণ জলতটে অবস্থিত আইসিই ভবনের সামনে প্রতিদিনই বিক্ষোভকারীরা জড়ো হচ্ছেন। সেখানে ফেডারেল এজেন্ট ও বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি অবস্থান চলছে। স্থানীয় নেতারা শান্ত থাকার আহ্বান জানালেও তারা ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কড়া সমালোচনা করছেন। তাদের দাবি, আইসিই ভবনটি অনুমোদিত নীতিমালা ভঙ্গ করে রাতারাতি মানুষ আটক রাখছে এবং ভূমি ব্যবহার বিধি লঙ্ঘন করছে। ফলে ভবনটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প এক আদেশে অ্যান্টিফাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশীয় সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অ্যান্টিফা ‘অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যা মূলত অতিবামপন্থি কর্মীদের ঢিলেঢালা এক আন্দোলন।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো দলকে দেশীয় সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ ধরনের উদ্যোগ সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে, যা বাক ও সমাবেশের স্বাধীনতা রক্ষা করে।
এর আগে এ বছরের শুরুর দিকে ট্রাম্প লস অ্যাঞ্জেলেস ও ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছিলেন। এছাড়া মেমফিস, টেনেসিতেও সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে লস অ্যাঞ্জেলেসে মেরিন সেনা পর্যন্ত পাঠিয়েছিলেন ট্রাম্প।
তবে সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফেডারেল আদালত রায় দেন যে, লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন ছিল অবৈধ এবং ‘পস কমিটাটাস অ্যাক্ট’-এর লঙ্ঘন। ওরেগনের ক্ষেত্রে একই প্রশ্ন আবারও উঠছে- প্রেসিডেন্টের এই মোতায়েনের কোনো আইনি ভিত্তি আদৌ আছে কি না।