চবি প্রতিনিধি || চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন আবাসিক হলে বিশেষ বিবেচনায় থাকছেন ছাত্রদল-শিবির ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, বিশেষ বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে থাকা এসব ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও বাগছাসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কারো কারো নেই হলে ওঠার ন্যূনতম অ্যাকাডেমিক ফলাফল। ফলে ভালো ফলাফল থাকা সত্ত্বেও আসন না পাওয়া শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি হলেই বিশেষ বিবেচনায় কিছু শিক্ষার্থীকে আসন দেওয়ার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় না দেখে তার অ্যাকাডেমিক ফলাফলের পাশাপাশি বাড়ির দুরত্ব ও আর্থিক অক্ষমতার দিকটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
বিশেষ বিবেচনায় থাকা শাখা ছাত্রশিবিরের সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি ও হল সংসদ নির্বাচনে হলটির সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবরার ফারাবি বলেন, “আমি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হলে এক সিনিয়র ভাইয়ের সিটে উঠি। তিনি হলে থাকতেন না, তাই তার সিটে থেকেছি। পরবর্তীতে, গত মাসে সর্বশেষ অ্যালটমেন্টে ছাত্রত্ব না থাকায় ওই ভাইয়ের সিট বাতিল হয়। এ হিসেবে আমারও সিটে থাকা অবৈধ হয়ে পড়ে। পরে আমি হলের প্রাধ্যক্ষ স্যারকে আমার আর্থিক অক্ষমতা এবং হলে আমার বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটির কথা জানালে তিনি আমাকে বিশেষ বিবেচনায় থাকার সুযোগ দেন।”
তিনি বলেন, “আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে আমার মাস্টার্সের পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। মূলত এ সময়টা হলে থাকার জন্য আবেদন করেছিলাম। হল প্রাধ্যক্ষ আমাকে অনুমতিও দিয়েছেন। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়, বরং একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হিসেবে আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমি তো অবৈধভাবে হলে থাকছি না।”
একই হলে বিশেষ বিবেচনায় থাকা বাগছাসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক ও চাকসুতে স্বতন্ত্র থেকে ভিপি প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, “প্রতিটা হলে আসন বরাদ্দের সময় প্রাধ্যক্ষের হাতে ১০টি আসন থাকে। আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে যখন হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়, তখন প্রশাসন নিয়ম করেছিল, আন্দোলনে যারা সক্রিয় ছিল, আহত হয়েছে এবং আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বিবেচনার কয়েকটা আসন বরাদ্দ থাকবে। আসন বরাদ্দের সময় আন্দোলনে আহত আমার বিভাগের ছোট ভাই মশিউর না থাকায় আমি আমার নামে আসন নিয়েছিলাম। এখন সিটে সে থাকে, আমি শহরে থাকি। তবে কিছুদিন ধরে আমি ওই সিটে থাকছি।”
চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক মো. জাবেদ বলেন, “আমার নম্বরপত্রে সিজিপিএ একটু সমস্যা হয়েছিল। পরে আমি নম্বরপত্র ঠিক করে উপ-উপাচার্য ড. কামাল স্যারের অনুমতি নিয়ে ডাবলার (এক আসনে দুইজন) হয়ে হলে উঠেছি। আমি যে সিনিয়রের সঙ্গে ডাবলার ছিলাম, তিনি চলে যাওয়ায় আমি এখন একা থাকি।” তবে তিনি কোন সিনিয়রের সঙ্গে ডাবলার ছিলেন তার নাম-শিক্ষাবর্ষ কিছুই বলতে পারেননি।
সোহরাওয়ার্দী হলে বিশেষ বিবেচনায় থাকা হল সংসদে ভিপি প্রার্থী জমাদিউল আওয়াল সুজাত বলেন, “আমি একটি আসনে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ডাবলিং করছি।”
তবে জানা গেছে, ওই সিটে বিশেষ বিবেচনায় শুধু তিনিই থাকেন। অন্যজন অভ্যুত্থানের পর প্রথম অ্যালটমেন্ট পেয়েছিলেন। তবে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা এবং দুষ্কৃতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে হল থেকে বের করে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে ওই আসনে বিশেষ বিবেচনায় থাকছেন সুজাত। আগে তিনি ছাত্রলীগের সিএফসি গ্রুপের রাজনীতি করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আবদুল মান্নান বলেন, “প্রাধ্যক্ষর ১০টি আসন বরাদ্দের ক্ষমতা আছে। ফারাবী নিয়মিত ডাইনিং ও ক্রীড়া কার্যক্রমে সক্রিয় ছিল। এছাড়া তার আর্থিক অস্বচ্ছলতার বিষয়টি জানিয়েছে। এজন্য তাকে আসন দেওয়া হয়েছে, পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নয়।”
বাগছাস নেতা মাহফুজ রহমানের আসনের বিষয়ে তিনি বলেন, “আসলে আন্দোলনে তাদের যে অবদান ছিল, যার কারণে দেশে একটা সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসছে। আর প্রশাসন থেকেও বলা ছিল, আন্দোলনে সক্রিয়দের বিষয়টা বিবেচনায় রাখতে। তখন হয়তো মাহফুজকে আসনটা দেওয়া হয়েছে।”
অতীশ দীপঙ্কর হলের প্রাধ্যক্ষ এজিএম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, “কেন্দ্রীয় আসন বরাদ্দ কমিটি থেকেই আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বিশেষ বিবেচনায় প্রশাসনের সাপেক্ষে কিছু শিক্ষার্থীকে বিশেষ বিবেচনা আসন দেওয়া হয়। আমার হলেও এ রকম কয়েকজনকে আসন দেওয়া হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে সংখ্যাটা বলতে পারছি না।”