লালমনিরহাট প্রতিনিধি || ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বিপৎসীমা অতিক্রম করার পর তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। সোমবার (৬ অক্টোবর) পানি কমে আসায় নিজেদের বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন লালমনিরহাটে নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষজন। তবে, কমেনি তাদের কষ্ট, এখনো নিম্নাঞ্চলে পানি রয়েছে। নদী পাড়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতংক।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যেই পাঁচটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা দ্রুত পানিবন্দী মানুষদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের তালিকা তৈরি করেন। জেলা প্রশাসন বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর জন্য জরুরি ত্রাণ সহায়তার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, আজ দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১০ মিটার। যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচে। গতকাল রাতে পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরে রাত ৯টায় পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিস্তাপাড়ে রেডএলার্ট জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অতিরক্ত পানির চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ফ্লান্ড বাইপাস কেটে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে তারা। ফলে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তাপাড়ের লাখো মানুষের। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কিছু অংশ প্লাবিত হয়। পানির চাপে ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বিশেষ করে আদিতমারী উপজেলার সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এর ব্রিজ অংশের নিচে সুরঙ্গ হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বাঁধটি ধ্বসে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি কিছু রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে।

সিন্দুর্না এলাকার রইচ উদ্দিন বলেন, “বাড়ির উঠানে কোমড় পানি। রাতে ঘুমাতে পারিনি। শিশুদের কোলে নিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। কখন কোনো সন্তান বিছানা থেকে পড়ে পানিতে ডুবে যায়, সেই আতংকে রাত কেটেছে।”
গোবর্দ্ধন গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, “সবখানে পানি আর পানি। আমন ধানের পাশাপাশি নানা ধরনের ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে। পুকুরে থাকা মাছ পানিতে ভেসে গেছে।”
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, “তিস্তার পানি বেড়ে গতকাল রাতে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকালে তা বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। বৃষ্টির পানি থাকায় পানি নেমে যেতে একটু সময় লাগছে। উজানের চাপ কমে যাওয়ায় বিকেলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে পারে। আমরা সবকিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”
বন্যা পরিস্থিতি ও জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সম্পর্কে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, “হঠাৎ করে সৃষ্ট বন্যায় জেলার অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে, আমরা ইতোমধ্যেই পাঁচটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশ দিয়েছি যেন তারা দ্রুত পানিবন্দী মানুষদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের তালিকা তৈরি করেন। জেলা প্রশাসন বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর জন্য জরুরি ত্রাণ সহায়তার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।”
তিনি বলেন, “পানিবন্দী পরিবারগুলোর তালিকা অনুযায়ী প্রতিজনকে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পানিবন্দী মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। বন্যায় যাদের ঘরের ক্ষতি হয়েছে, তাদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টিনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।”