1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Golam Saroar : Golam Saroar
পৌরসভার ময়লার ভাগাড় যেন টাকার খনি - দৈনিক প্রথম ডাক
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

পৌরসভার ময়লার ভাগাড় যেন টাকার খনি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৪৩ বার দেখা হয়েছে
ঠাকুরগাঁও পৌরসভা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি || ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ময়লার ভাগাড় যেন টাকার খনি। ময়লায় হাত দিলেই টাকা আর টাকা! ময়লাতেই ভাগ্য ফিরছে পৌর কর্মকর্তাদের। শুধু আশ্রয় নিতে হয়েছে খানিকটা দুর্নীতির।

দৈনিক প্রথম ডাকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমনই কিছু তথ্য। যেনো অনিয়ম ও দুর্নীতির পশরা খুলে বসেছে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা। শুধুমাত্র পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন খাত থেকেই বছরে লোপাট হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। অন্যায়ভাবে লোপাট করা সম্পূর্ণ অর্থই যাচ্ছে পৌরা কর্তাদের পকেটে।

পৌরসভার সূত্র মতে, ১৯৯৭ সালে ৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয় ঠাকুরগাঁও। শুরুর লগ্ন থেকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা এই পৌরসভায় ১৩৮ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর বিপরীতে খরচ দেখানো হয়েছে ৯ লক্ষ ৪১ হাজার ১০০ টাকা।

পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন শিটে দেখা যায়, পৌরসভার বেতন শিটে ঝাড়ুদার হিসেবে দেখানো হয়েছে ৩৬ জনকে। তবে বাস্তবে শহরে ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ করছেন মাত্র ২২ জন। সেই সাথে বেতন শিটে দেখা গেছে একই নামে একাধিক খাত থেকে টাকা উত্তোলন হচ্ছে, কিছু পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়মিত বেতন নিলেও তারা বাস্তবে কাজ করছে না। বেশ কিছু ভূয়া নাম বসিয়ে টাকা উত্তোলন হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ টাকার বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু কর্মচারীকে দিচ্ছে অতিরিক্ত বেতন ও সুযোগ সুবিধা, কেউবা বেতন শিটে স্ত্রীর নাম বসিয়েও অর্থ আত্মসাৎ করছে।

এই অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের প্রধান সুপার ভাইজার ও হিসাব রক্ষক দায় চাপিয়ে দেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার উপর।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার হিসাব রক্ষক লিটন ইসলাম বলেন, “আমি পৌরসভার শুধুমাত্র একজন একাউন্টেন। আমার হাতে তেমন কিছুই নেই। আমি যা করি আমাদের নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে করি। তিনি আমাকে আদেশ করেছেন, আমি টাকা দিয়েছি। আমি আদেশ মানতে বাধ্য। আমার হাত-পা বাঁধা।”

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম বলেন, “আমি যা করেছি নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে করেছি। আমি একটু অতিরিক্ত কাজ করি। তাই আমার বউয়ের নামে একটু বাড়তি টাকা নেই। বাইরের তো কারো নাম দেইনি। নিজের বউয়ের নাম দিয়েছি।”

এদিকে অনিয়ম, দুর্নীতির সত্যতা স্বীকার করে নিম্ন পদস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীদের দিকে তীর চালালেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব উজ জামান। তিনি বলেন, “আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়েছেন। এমন হয়তো আরো বিভিন্ন ভুল ক্রমাগত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এত নিচু স্তরের বিষয়গুলো আমার জানার কোনো সুযোগ নেই।”

পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন শিটে জালিয়াতি হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “কিছু কিছু বিষয় আমি জানতাম। তবে এগুলো আরো আগে থেকে হয়ে আসছিল। আমি আর বাধা দিয়ে স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে চাইনি।”

এদিকে পৌর কর্তাদের দুর্নীতির প্রভাব পড়েছে শহরজুড়ে। অধিকাংশ বাজারে ও রাস্তায় ঝাড়ু দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।

পৌর শহরের ব্যাসায়ী আলী হোসেন বলেন, “আমার দোকানের সামনে প্রতিদিন ময়লার স্তুপ জমে যায়। পৌরসভার কেউ এসে পরিষ্কার করে না। নিজেকেই করতে হয়। নিজে করতে না পারলে দুর্গন্ধের কারণে দোকানে বসতে পারি না।”

একই অভিযোগ ব্যবসায়ী সুজন ইসলামেরও। তিনি বলেন, “আমার ১০ বছর ব্যবসার অভিজ্ঞতায় কখনো দেখিনি আমার প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তা কেউ ঝাড়ু দিয়েছে। বছরে একবার কখনো ড্রেন পরিষ্কার হয়, কখরনা হয় না। আমরা নিয়মিত পৌর কর পরিশোধ করি। তাহলে আমাদের রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া হয় না কেনো?”

সানজিদা আক্তার নামের এক বাসিন্দা বলেন, “আমার বাসার সামনের ড্রেন বছরে একবার পরিষ্কার করা হয় না। বর্ষাকালে রাস্তায় পানি জমে। অনেক সময় বাড়িতে পানি উঠে যায়।”

যথেষ্ট লোকবল না থাকা, স্বল্প বেতনের বিনিময়ে অর্ধ বেলা কাজের চুক্তিসহ বিভিন্ন কারণে শহরজুড়ে সঠিকভাবে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ঝাড়ুদার বিজয় বলেন, “আমি একা প্রায় তিন চারজনের জায়গা ঝাড়ু দিচ্ছি। তবুও বেতন মাত্র তিন হাজার। কীভাবে আর মনযোগ থাকবে কাজে?”

ড্রেনেজ পরিচ্ছন্ন কর্মী গোবিন্দ বলেন, “আমার বেতন ৯ হাজার টাকা। কাজ করি আধা বেলা। আমাদের আরকিছু বেতন বাড়ায় দিলে সারাদিন কাজ করতে পারি। এতে কাজ ভালো হবে। সেইসাথে কিছু লোকবল বাড়ানো প্রয়োজন।”

পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন শিটে অসঙ্গতি থাকার কথা নিশ্চিত করে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পৌরসভার প্রশাসক সরদার মোস্তফা শাহীন। তিনি বলেন, “আমি খোঁজ নিয়েছি। এখানে কিছু অসঙ্গতি আমি পেয়েছি। এটা নিয়ে এরইমধ্যে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed By: SISA IT