স্কোরঃ বাংলাদেশ ১০৯/১০ (২৮.৩ ওভার)
আফগানিস্তান ১৯০/১০ (৪৪.৫ ওভার)
সেই ছন্নছাড়া বাংলাদেশ। বোলিংটা যা-ই হয়েছে, ব্যাটিং হয়েছে যাচ্ছেতাই। তাতে বড় পরাজয়কে সঙ্গী করেছে দল। দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ের সঙ্গে নিবেদনের প্রবল ঘাটতি ফুটে উঠেছে। জয়ের, ন্যূনতম লড়াই করার কোন মানসিকতা দল দেখাতে পারেনি।
রশিদ খানের এক স্পেলেই শেষ বাংলাদেশ। ৮.৩ ওভারে ২ মেডেনে ১৭ রানে ৫ উইকেট নেন রশিদ।
এই পরাজয়ে সিরিজ খোয়াল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতেও মিরাজের দল হেরেছিল ৫ উইকেটে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টানা তিন সিরিজ হারল বাংলাদেশ। ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে বাংলাদেশকে তারা হারিয়েছিল।
উঁকি দিচ্ছে পরাজয়
ব্যাটিং ব্যর্থতায় বিশাল পরাজয় দিচ্ছে উঁকি। প্রতিরোধহীন ব্যাটিংয়ে সিরিজ হারের ধারপ্রান্তে বাংলাদেশ।
লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাকফুটে বাংলাদেশ
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটা একদমই ভালো হয়নি। উইকেটের আত্মাহুতিতে বিপর্যয়ে পড়েছে দল।
১২ ওভার শেষে ৪ উইকেটে স্কোর বোর্ডের রান কেবল ৫৮। ৩৮ ওভারে বাংলাদেশকে আরো ১৩৩ রান করতে হবে। হাতে আছে ৬ উইকেট। এই মুহূর্তে ক্রিজে আছেন তাওহীদ হৃদয় ও জাকের আলী।
আফগানিস্তানের হয়ে ৩টি উইকেট নিয়েছেন পেসার আজমতউল্লাহ উমারজাই। ডানহাতি পেসার আহামরি কোন ভালো বোলিংও করেননি। দুই ওপেনার তানজিদ ও সাইফ তার শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। তানজিদ ০ ও সাইফ ২২ রানে আউট হন।
ফিল্ডারের হাতের নাগালে বল রেখে ২ রান নিতে গিয়ে শান্ত রান আউট হন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ এলবিডব্লিউ হন আজমতউল্লাহর বলে। দায়িত্ব নিয়ে কোন ব্যাটসম্যানই হাল ধরতে পারেননি। সিরিজ বাঁচাতে আজকে জয়ের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের টার্গেট ১৯১ রান
দু্্যতিময় বোলিংয়ে আফগানিস্তানকে বেশি দূর যেতে দেয়নি বাংলাদেশ। সবকটি উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তান করতে পারে ১৯০ রান। ৪৪.৫ ওভারে থেমে যায় ইনিংস।
আফগানিস্তানের শেষ ব্যাটসম্যান রহমত শাহ ইনিংস শেষ করতে পারেননি। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে একবার ফিরে যাওয়ার পর আবার মাঠে নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু এক বলের বেশি টিকতে পারেননি৷ আবার তাকে মাঠ ছেড়ে চলে যেতে হয়৷ ফলে ওখানেই থেমে যায় আফগানিস্তানের ইনিংস।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সেরা ছিলেন মিরাজ। অধিনায়ক ১০ ওভারে ১ মেডেনে ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট নেন তানজিম হাসান ও রিশাদ হোসেন।
সেঞ্চুরি পাওয়া হলো না জাদরানের
পথের কাঁটা দূর করলেন মিরাজ। বাংলাদেশের বোলিংয়ের বিপক্ষে আফগানিস্তানের কোন ব্যাটসম্যান যখন দাঁড়াতে পারছিলেন না তখন সময় নেন ইব্রাহিম জাদরান। ইনিংসে শুরু থেকে নিজের উইকেট আগলে রেখে রান তোলেন এই ব্যাটসম্যান। তুলে নেন ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি।
কিন্তু সেঞ্চুরিটা আর পাওয়া হয়নি তার। আফগানিস্তানকে অল্প রানে আটকে রাখতে তাকে ফেরানোর প্রয়োজন ছিল। মিরাজ সেই কাজটাই করেন। তবে উইকেটের জন্য কৃতিত্ব দিতে হবে রিশাদকেও। জাদরানের বিশাল শট সীমানায় আটকে যান রিশাদ। ১৪০ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯৫ রান করেন তিনি।
এর আগে মিরাজের এক ওভারে জোড়া উইকেট পায় বাংলাদেশ। প্রথমে রান আউট হন খারাতে। পরে রশিদ খান মিরাজের বলে কাভারে ক্যাচ দেন। জোড়া উইকেটে বাংলাদেশের বেশ ভালো অবস্থানে চলে এসেছে।
প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টায় আফগানিস্তান
বাংলাদেশের জন্য বিপদ হতে পারতেন মোহাম্মদ নবী। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান অনেকবারই বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন। আজকেও সেই চেষ্টা ছিল তার। শুরুটা মন্দ করেননি। তবে তাকে আটকে দেন তানজিম হাসান। তার লেন্থ বল আগেভাগে খেলতে গিয়ে কাভারে কেচে দেন নবী। ৩০ বলে ২২ রানে থেমে যায় তার ইনিংস৷ দারুণ ক্যাচ নেন মিরাজ।
এদিকে ইব্রাহিম জাদরান ফিফটি তুলে একাই লড়াইয়ে রেখেছেন দলকে। সতীর্থরা আসা-যাওয়ার মিছিল থাকলেও ২২ গজে উইকেট আঁকড়ে পরে আছেন তিনি। ওয়ানডেতে এটি তার অষ্টম ফিফটি।
৬ বলে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে আফগানিস্তান
১০ ওভার শেষে কিছুটা প্রতিরোধ করে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে চেয়েছিলেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদি ও ইব্রাহিম জাদরান। এর আগে রহমত শাহ ও ইব্রাহিম জুটি বেঁধেছিলেন। ৩৪ বলে ২৭ রান যোগ করেন তারা।
রহমত রিটায়ার্ড হয়ে মাঠ ছেড়ে উঠে যান ৯ রানে। এরপর হাসমতউল্লাহ ও জাদরানের লড়াই শুরু হয়। কিন্তু ১৩ রানের বেশি আসেনি তাদের জুটিতে।
বাংলাদেশের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ১৮তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন। হাসমতউল্লাহকে ভেতরে ঢোকানো এক বলে বোল্ড করেন। ৫ বল পর নতুন ব্যাটসম্যান ও গত ম্যাচের নায়ক আজমতউল্লাহ উমারজাইকে ফেরায় বাংলাদেশ। স্লিপে তাকে তালুবন্দি করান লেগ স্পিনার রিশাদ।
৬ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তান কিছুটা ব্যাকফুটে। ২০ ওভার শেষে তাদের রান ৪ উইকেটে ৮২।
২ উইকেট তুলে এগিয়ে বাংলাদেশ
পাওয়ার প্লে’তে বাংলাদেশ ২ উইকেট পেয়েছে। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও সেদিকুল্লাহ অতলকে আউট করেছেন বোলাররা। শুরুতে বাংলাদেশ বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছে৷ আলগা বোলিং না করায় তেমন রানও আসেনি।
রান তুলতে না পেরে গুরবাজ আক্রমণাত্মক হয়ে ডাউন দা উইকেটে এসে একটি ছক্কা ও চার আদায় করেন। বাড়তি আগ্রাসী মনোভাবে ব্যাটিং করতে গিয়েই নিজের উইকেট হারান তিনি। তানজিমের শর্ট বল উড়াতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন। সীমানায় জায়গায় দাঁড়িয়ে সহজ ক্যাচ নেন জাকের। ১১ বলে ১১ রান করেন তিনি।
তিনে নামা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান অতলকে সাজঘরে ফেরত পাঠান স্পিনার তানভীর। নিজের প্রথম ওভারে তানভীর উইকেট পান। এগিয়ে এসে বল উড়াতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন তানজিম সাকিবের হাতে।
১০ ওভার শেষে আফগানিস্তানের রান ২ উইকেটে ৪৩।
মোস্তাফিজ-রিশাদকে নিয়ে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
আবুধাবিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আগে বোলিং করবে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদি টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাংলাদেশ একাদশে দুইটি পরিবর্তন করা হয়েছে। তাসকিন ও হাসান নেই। মোস্তাফিজ-রিশাদ ফিরেছেন। আফগানিস্তান একাদশে কোন পরিবর্তন আনেনি।
প্রথম ওয়ানডেতে ৫ উইকেটের হারে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।আজ হারলেই সিরিজ হাতছাড়া হবে বাংলাদেশের। প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটিং মনপুত হয়নি। বোলিংয়ে খানিকটা লড়াই হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত পুঁজি না থাকায় সেই লড়াইও ধোপে টেকেনি।
আফগানিস্তানকে আজ হারাতে হলে বাংলাদেশকে তিন বিভাগে অত্যন্ত ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। ওয়ানডে ক্রিকেট বাংলাদেশের স্বাচ্ছন্দের ফরম্যাট। অথচ এখানেই শেষ কয়েকটি সিরিজে ভালো সময় কাটছে না বাংলাদেশের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারলে সমালোচনায় আরো বিদ্ধ হবেন ক্রিকেটাররা। তাইতো আজকের ম্যাচটি জয় অতি জরুরি। সেই লড়াই কতটুকু করতে পারে দেখার।