1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Golam Saroar : Golam Saroar
হাসপাতাল নিজেই যেন রোগী! - দৈনিক প্রথম ডাক
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

হাসপাতাল নিজেই যেন রোগী!

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৪৫ বার দেখা হয়েছে
ঠাকুরগাঁও হাসপাতালের ভিতরের চিত্র

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি || ঠাকুরগাঁওয়ের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালটি উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসাস্থল। কিন্তু যে স্থানে মানুষ আসে সুস্থতার আশায়, সেই স্থানই এখন যেন রোগ উৎপত্তির কেন্দ্রস্থল হয়ে পড়েছে। নোংরা পরিবেশ, অস্বাস্থ্যকর অবস্থা আর অব্যবস্থাপনায় ভরে গেছে হাসপাতালটি।

রোগীরা বলছেন, এখন এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে মানুষ সুস্থ নয় বরং আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অপরদিকে ধারণক্ষমতার দুই থেকে তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, জনবল সংকট ও অব্যবস্থাপনার কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও সেবাগ্রহীতারা মনে করছেন- ঠাকুরগাঁওয়ে দ্রুত একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন ছাড়া স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের বিকল্প নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের ধারণক্ষমতা ২৫০ শয্যা হলেও প্রতিদিন ভর্তি থাকে ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী। রোগীর চাপে বেড পাওয়া যায় না, অনেক সময় ফ্লোরেও জায়গা মেলে না। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় ডাক্তার ও নার্সদের।

হাসপাতালের করিডোর, টয়লেট এমনকি রোগীর ওয়ার্ডেও নোংরা পরিবেশ। নোংরার মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সুস্থ মানুষও সেখানে প্রবেশ করলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। হাসপাতালের দুটি লিফটের মধ্যে একটি নষ্ট হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ভিড়ের চাপে গুরুতর অসুস্থ রোগী বা বয়স্কদের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। দীর্ঘদিন ঘরে বালতি ও পাত্রে জমে থাকা নোংরা পানি থেকে জন্ম নিতে পারে এডিস মশাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ। এছাড়াও হাসপাতালের ভিতরে কুকুর-বিড়ারের অবাধ বিচরণ তো আছেই!

এমনকি আইসিইউ, ডায়ালাইসিস ইউনিট এবং পিসিআর ল্যাবের জন্য নির্ধারিত ভবন ও স্থান থাকলেও, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে সেগুলো চালুই হয়নি।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, এই হাসপাতালে অধিকাংশ পরীক্ষার রিপোর্ট বাইরে থেকে করাতে হয়। যেসব ওষুধ হাসপাতল থেকে দেওয়ার কথা সেসব ওষুধ নিতে রোগীদের ছুটতে হয় বাইরের ফার্মেসিতে। এছাড়া একটু জটিল অবস্থা দেখলেই রোগীকে দিনাজপুর, রংপুর বা ঢাকায় রের্ফাড করা হয়। এতে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই অনেকের মৃত্যু হয়।

সময় মতো ডাক্তার পাওয়া এখানটায় ভাগ্যের ব্যাপার। টয়লেটগুলোতে ঢোকা যায় না। বেসিনে হাত ধোয়ার অবস্থা নেই। এখানে রোগী নিয়ে এলে সুস্থ মানুষই অসুস্থ হয়ে পড়েন বরে অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।

মো. মুজাহিদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, “এখানকার পরিবেশ এতটাই নোংরা যে বলার মত না। যেখানে সেখানে পানি ও ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকে। হাসপাতালে অনেকগুলো টেস্ট হয় না। রোগী নিয়ে টেস্ট করাতে বাইরে যেতে হয়। এভাবে আমরা চরম ভোগান্তির মধ্যে আছি। এছাড়া এখানে রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী সেবা দেওয়া মতো জনবল নেই। জনবল বৃদ্ধি করলে হয়তো কিছুটা সমস্যার সমাধান হবে।”

বালিয়াডাঙ্গী থেকে অসুস্থ মাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, “যেগুলো ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেওয়ার কথা, সেই ওষুধগুলো আবার আমাদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। তাহলে সরকার যে ওষুধ দিচ্ছে সেই ওষুধগুলো যাচ্ছে কোথায়?”

শহীদুল ইসলাম উজ্জল তার ছেলেকে নিয়ে ভর্তি আছেন হাসপাতালে তিনি বলেন, “ধরতে গেলে এই হাসপাতালে চিকিৎসা বলতে তেমন কিছুই হচ্ছে না। সময় মতো ডাক্তার পাওয়া যায় না। নার্সরা ঠিক মতো কথা শোনেন না। তাদের কোন কিছু বলতে গেলে বিরক্ত বোধ করেন। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে এখানকার লিফট নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এদিকে কেউ নজর দিচ্ছেন না।”

রিক্তা পারভীন বলেন, ‘হাসপাতালের টয়লেটের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, আমরা সেগুলো ব্যবহার করতে পারছি না। নোংরা থাকায় বেসিনে হাত ধোয়ারও উপায় নেই। এখানে আমরা আসি সুস্থতার জন্য কিন্তু রোগীর সাথে যারা আসি তারাই মনে হয় অসুস্থ হয়ে পড়ছি।”

বাধন নামে এক ব্যক্তি বলেন, “এখানে রোগী নিয়ে এলে অধিকাংশ রোগীকেই দিনাজপুর, রংপুরসহ ঢাকায় রেফার করে দেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ রোগীর পথেই মৃত্যু হয়। ঠাকুরগাঁওয়ে একটি ভালো মানের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল জরুরি হয়ে পড়েছে।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, এই হাসপাতালে প্রথম শ্রেণির চিকিৎসক ৫৯ জনের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৪০ জন। দ্বিতীয় শ্রেণির ৩টি পদেই শূন্য। দ্বিতীয় শ্রেণির নার্সের পদ সংখ্যা মাত্র ৯১ জন। তার বিপরীতে কর্মরত আছেন ৮৮ জন। তৃতীয় শ্রেণির পদ সংখ্যা ৪২ জন হলেও আছেন মাত্র ২০ জন। এখনো শূন্য পদ ২২টি। চতুর্থ শ্রেণির লোকবল ২৫ জনের বিপরীতে আছেন ১৭ জন। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে মঞ্জুরীকৃত মোট পদের সংখ্যা মাত্র ২২১টি। এর মধ্যে আবার এখনো শূন্য হয়ে পড়ে আছে ৫৬ জনের পদ।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. রকিবুল আলম (চয়ন) বলেন, “রোগীর চাপ আমাদের সক্ষমতার অনেক বেশি। জনবল কম, আবার প্রায় তিনটি জেলার মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন এখানে। ২৫০ শয্যার অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় এই হাসপাতালে নার্সের সংখ্যা কম। তাই এক শিফটে ২০-২৫ জন নার্স দিয়ে ৬০০ থেকে ৭০০ রোগীর সেবা দেওয়া অসম্ভ হয়ে পড়ে। তারপরেও সীমিত সম্পদে যতটা পারি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এছাড়া যেসব রোগীদের ইউনিট এখানে চালু নেই ও আইসিইউ, সিসিইউ, ডায়ালাইসিস ইউনিট এবং পিসিআর ল্যাবের মতো রোগীদের রেফার করতে হয়। ভবিষতে যদি এই ডিপার্টমেন্টগুলো এখানে চালু হয়, তাহলে রেফারের সংখ্যা কমে আসবে।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed By: SISA IT