1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Golam Saroar : Golam Saroar
ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে ৬ দফা প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার - দৈনিক প্রথম ডাক
শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০২:০৫ পূর্বাহ্ন

ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে ৬ দফা প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার

নিউজ ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৪৫ বার দেখা হয়েছে
সোমবার বিশ্ব খাদ্য ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

নিউজ ডেস্ক || বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পূর্ণ সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনের জন্য ছয় দফা প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, “ক্ষুধা কোনো অভাবের কারণে নয়, এটি আমাদের তৈরি করা অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতা। আমাদের এই ব্যবস্থা বদলাতে হবে।”

সোমবার (১৩ অক্টোবর) ইতালির রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য ফোরাম (ডব্লিউএফএফ) ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বৈশ্বিক খাদ্য ও অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের ছয় দফা প্রস্তাবে অধ্যাপক ইউনূস প্রথমেই বলেন, “যুদ্ধ বন্ধ করুন, সংলাপ শুরু করুন এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন”—এর মাধ্যমে ক্ষুধা ও সংঘাতের দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, “টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে অর্থায়নের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে টিকে থাকার সক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে “

তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, “আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠন করে খাদ্য সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল রাখতে হবে।”

চতুর্থ প্রস্তাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অর্থায়ন, অবকাঠামো ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বের মাধ্যমে সহায়তা দিতে হবে।”
পঞ্চম প্রস্তাবে তিনি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বাণিজ্যনীতিকে খাদ্য নিরাপত্তার সহায়ক হতে হবে, বাঁধা নয়।”

ষষ্ঠ প্রস্তাবে তিনি বলেন, “প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথের তরুণ কৃষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য।”

২০২৪ সালে ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “অথচ আমরা যথেষ্ট খাদ্য উৎপাদন করেছি। এটি উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়— এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা, নৈতিক ব্যর্থতা।”

তিনি বলেন, “ক্ষুধা দূর করতে যেখানে কয়েক বিলিয়ন ডলার জোগাড় করা যায়নি, সেখানে অস্ত্র কিনতে বিশ্ব ব্যয় করেছে ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। একে কি আমরা অগ্রগতি বলব?”
অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনা করতে হবে। পুরোনো মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা পদ্ধতি কোটি কোটি মানুষকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। আমাদের এমন এক নতুন ব্যবসা পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে— সামাজিক ব্যবসা, যা ব্যক্তিগত মুনাফার জন্য নয়, বরং সমাজের সমস্যা সমাধানের জন্য।”

অধ্যাপক ইউনূস তাঁর স্বপ্নের ‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ (শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ) ধারণা ব্যাখ্যা করে বলেন, “এটি কোনো কল্পনা নয়, এটি অপরিহার্য— বিশ্ব বাঁচানোর একমাত্র পথ।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসার সাফল্য আমরা দেখেছি। গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়েছে, দরিদ্র নারীরাও উদ্যোক্তা হতে পারেন। ”

তরুণ, নারী, কৃষক, কৃষিুউদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের সহায়তায় সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই ধরনের উদ্যোগের জন্য আইনগত ও আর্থিক কাঠামো তৈরি করতে হবে, বাঁধা নয়।”

তরুণদের ভূমিকা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আজকের তরুণ প্রজন্ম আগের তুলনায় অনেক বেশি সংযুক্ত, সৃজনশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর। তাদের চাকরি খোঁজার কথা বলবেন না, বরং চাকরি সৃষ্টির ক্ষমতায়ন করুন।”

তিনি আহ্বান জানান, “আসুন, একটি তিন-শূন্য বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করি।”

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এই ফোরামের তিনটি স্তম্ভ—যুব, বিজ্ঞান ও বিনিয়োগ—শুধু স্লোগান নয়, এটি আমাদের খাদ্যব্যবস্থা ও সমাজ রূপান্তরের প্রধান হাতিয়ার।”

“বিশ্বে সম্পদ ও প্রযুক্তি রয়েছে, ভবিষ্যতে আরো উন্নত প্রযুক্তি আসবে। এখন দরকার সৃজনশীল চিন্তা ও সঠিক ব্যবসা কাঠামো—যার মাধ্যমে আমরা নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে পারব। আমরা যদি কল্পনা করতে পারি, আমরা তা বাস্তবেও সৃষ্টি করতে পারব” বলেন তিনি।

তথ্যসূত্র : বাসস

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed By: SISA IT