আন্তর্জাতিক ডেস্ক || যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর অনুমোদন দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিকোলাস মাদুরোর সরকার।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালাতে সিআইকে অনুমোদন দিয়েছেন বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত খবরটির সত্যতা স্বীকার করেছেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে ট্রাম্প বলেন, আমি দুটি কারণে সিআইএকে অনুমতি দিয়েছি। প্রথমত, ভেনেজুয়েলা তাদের কারাগারগুলো খালি করে সব বন্দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। দ্বিতীয় কারণ, মাদক। অনেক মাদক আসে ভেনেজুয়েলা থেকে, বিশেষ করে সমুদ্রপথে। এবার আমরা স্থলপথেও তা বন্ধ করবো।
বিবিসি বলছে, মার্কিন কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে ট্রাম্পের এমন প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি নজিরবিহীন ঘটনা, কারণ গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম সাধারণত গোপনীয়তার আড়ালে ঢাকা থাকে।
এই অঞ্চলের মাদক ব্যবসায় ভেনেজুয়েলার বড় ভূমিকা রয়েছে। সিআইএ-এর লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে উৎখাত করা কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “এটা আমার উত্তর দেওয়ার মতো প্রশ্নই নয়, এটা কতটা হাস্যকর প্রশ্ন ভাবুন তো।”
এদিকে, বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মাদুরো বলেন, “না হবে কোনো সরকার পরিবর্তন, না হবে সিআইএ-নিয়ন্ত্রিত কোনো অভ্যুত্থান। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া- এসব ব্যর্থ যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে বলি- আমরা যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।”
বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভেনেজুয়েলার উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় সন্দেহভাজন মাদক বহনকারী নৌকাগুলোতে মার্কিন বাহিনী ইতিমধ্যেই কমপক্ষে পাঁচটি হামলা চালিয়েছে, যাতে ২৭ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই অভিযানগুলোকে ‘বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
বুধবার হোয়াইট হাউজে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে মাদক পাচারকারীদের উপর আরো হামলার কথা বিবেচনা করছে।
ভেনেজুয়েলা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করেছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো কিছুদিন আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, দেশটি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনের পর ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরোর বৈধতা আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত হয়। ট্রাম্প প্রশাসনও মাদুরোর সরকারকে ভেনেজুয়েলার ‘বৈধ সরকার’ বলে মনে করে না। মার্কিন কর্মকর্তারা মাদুরোর বিরুদ্ধে ‘কার্টেল অব দ্য সানস’ নামের একটি মাদকচক্র পরিচালনার অভিযোগ এনে তার গ্রেপ্তারে ৫ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। তবে মাদুরো এসব অভিযোগ অস্বীকার করে একে ‘আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, ট্রাম্পের অনুমোদনের ফলে সিআইএ ভেনেজুয়েলায় একতরফাভাবে অথবা যেকোনো বৃহত্তর মার্কিন সামরিক কার্যকলাপের অংশ হিসেবে অভিযান পরিচালনা করতে পারবে।
তবে সিআইএ ভেনেজুয়েলায় অভিযানের পরিকল্পনা করছে কিনা, নাকি সেই পরিকল্পনাগুলো আকস্মিক পরিস্থিতি হিসেবে রাখা হচ্ছে তা এখনও অজানা, তবে দক্ষিণ আমেরিকায় এই গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে আটটি যুদ্ধজাহাজ, একটি পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন ও কয়েকটি যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছেন। হোয়াইট হাউজের ভাষ্য, এটি মাদক পাচার দমনের অংশ। তবে এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির ফলে ভেনেজুয়েলায় সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো চলতি সপ্তাহের শুরুতে রাজধানী কারাকাসের পেতারে ও পার্শ্ববর্তী মিরান্দা রাজ্যে সামরিক মহড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। টেলিগ্রামে দেওয়া বার্তায় তিনি বলেছিলেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক মিলিশিয়াকে তেলসমৃদ্ধ দেশটির প্রতিরক্ষায় প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের যুদ্ধবাজ ও উসকানিমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। সিআইএ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক মোতায়েন স্পষ্টতই আগ্রাসন, হুমকি ও হয়রানির নীতি।”