কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || লাখো মানুষের উপস্থিতি আর বাউল সাধুদের মিলন মেলায় মুখর ছেঁউড়িয়ায় লালন সাঁইজির আখড়াবাড়ি। দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে এসেছেন লালন অনুসারী সাধু-গুরুরা।
লালন সাঁইজির ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে এবার জাতীয়ভাবে পালিত হচ্ছে লালন স্মরণ উৎসব। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে শুক্রবার লালন সাঁইজির ওপর আলোচনায় অংশ নেন দেশ-বিদেশের সাহিত্য সমালোচক ও তাত্ত্বিকরা।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) শুরু হওয়া তিন দিনের সাধুসঙ্গ ও রবিবার (১৯ অক্টোবর) পর্যন্ত গ্রামীণ মেলা চলবে। তিন দিনের অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং লালন সংগীতের আসর। প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত চলবে লালনের গান।
এসব আয়োজনের পাশাপাশি কালিগঙ্গা নদীর পাড়ে মাঠে বসেছে পাঁচ দিনের গ্রামীণ মেলা। এ বছর লালন উৎসব জাতীয় পর্যায়ে করার অংশ হিসেবে আখড়াবাড়ির মূলমঞ্চ ও মেলার মাঠে স্টল নির্মাণের তত্ত্বাবধান করছে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়।
মেলায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০০টি দৃষ্টিনন্দন স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। মাঠের দক্ষিণ পাশে তৈরি করা হয়েছে প্রধান মঞ্চ, আর উত্তর পাশে রয়েছে হস্তশিল্প, পোশাক, বাদ্যযন্ত্র ও স্থানীয় খাদ্যপণ্যের দোকান। লালন শাহের সমাধির পাশের উন্মুক্ত শেডেও ভক্তরা নিরালায় বসে সঙ্গীত পরিবেশন করছেন এবং লালনের অমর বাণী ছড়িয়ে দিচ্ছেন আপন তালে।

তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনে ছেঁউড়িয়ায় জড়ো হয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লাখো মানুষ। এমন জনস্রোত আগে কখনো হয়নি বলে জানান বাউল-সাধুরা। আখড়াবাড়ি ছাড়িয়ে মানুষ রাত কাটিয়েছে এক কিলোমিটার দূরে গড়াই নদের পাড়ে। রাত যতই বেড়েছে, মানুষের জমায়েত ততই বেড়েছে। আখড়াবাড়ির দুই দিকের সড়কের এক কিলোমিটার আগে থেকে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিন সকালে ‘বাল্যসেবা’। এই পর্বে সকালে অনেক বাউল ‘ভেক গ্রহণ’ করেন। পায়েস মুড়ি খেয়ে গান বাজনাতত্ত্ব আলোচনা চলতে থাকে। দুপুরে হয় ‘পূর্ণসেবা’। সাদা ভাত, মাছ, কলাইয়ের ডাল, সবজি ও দই। বিকেল থেকে চলতে থাকে অবিরাম ধারায় গান। তবে আগের দিন সারা রাত গান করে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া বাউল সাধুদের অনেকেই কালী নদীর পাড়ে রাজঘাটে যান। সেখানে তারা গোসল সেরে নেন।
বাউলেরা জানান, গুরু-শিষ্যের মধ্যে প্রকৃত প্রেম জাগে। খুঁজে নেন আত্মার মিল। পান শান্তির সুখপাখি। প্রকৃতির প্রেমে সাড়া দিয়ে প্রতি বছর এই তিরোধানে আসেন। এবার কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে ঢাকার একাধিক ট্রেনের যোগাযোগ থাকায় মানুষের ভিড় যেন বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে। এবার মেলায় বেচাকেনাও হচ্ছে প্রচুর।
এ আয়োজনে আগত আলম নামে এক সাধু বলেন, “সরকারের এমন উদ্যোগ অনেক আগেই নেওয়া উচিত ছিল। তবে দেরিতে হলেও লালনের বাণীকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তুলে ধরায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।”
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জানান, উৎসবকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তত রয়েছে।