খেলাধুলা প্রতিবেদক ||
স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৩৩/১০ (৩৯ ওভার), বাংলাদেশ ২০৭/১০ (৪৯.৪ ওভার)
ফলাফল: বাংলাদেশের ৭৪ রানের জয়।
৬ উইকেট নিয়ে রেকর্ডের পাতায় রিশাদ হোসেন। প্রথম বাংলাদেশি স্পিনার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৬ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়লেন রিশাদ। এর আগে মোস্তাফিজুর রহমান দুইবার ও রুবেল হোসেন একবার করে ওয়ানডেতে ৬ উইকেট পেয়েছেন।
তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ওয়ানডেতে ৭৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পুঁজি খুব একটা বড় ছিল না। কিন্তু মিরপুরের ২২ গজ ছিল স্পিনারদের প্রাণ ভোমরা। উইকেটের পূর্ণ ব্যবহার করে নিখুঁত লাইন ও লেন্থ ধরে রেখে বোলিং করে একে একে ৬ উইকেট নেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ফাইফারের পর বিরতি পেয়েছিলেন। ৩৯তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে আবার সাফল্য পান। ক্যারিবীয়ানদের শেষ ব্যাটসম্যান জেয়ডান সিলসকে মিরাজের হাতে তালুবন্দি করান রিশাদ। ৩৫ রানে তার শিকার ৬ উইকেট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের অষ্টম উইকেটের পতন, জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ
রিশাদের ঘূর্ণি জাদুর পর তানভীর, মিরাজ ও মোস্তাফিজ ১টি করে উইকেট পেয়েছেন। তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৮ ব্যাটসম্যান ফিরেছেন সাজঘরে। লক্ষ্য এখনও বহুদূর তাদের। বাংলাদেশ এখান থেকে জয়ের সুবাস পাচ্ছে।
রিশাদের ৩ ওভারে ৪ উইকেট, ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার
দারুণ বোলিংয়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরালেন রিশাদ হোসেন। ব্রেক থ্রু এনে দেওয়ার পর ৩ ওভারে ৪ উইকেট পেলেন তিনি। তাতে পূরণ হয়ে গেল তার ফাইফারের স্বাদ।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার প্রথম ফাইফার। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্বিতীয়। এর আগে ২০০৪ সালে শাইনপুকুরের হয়ে ব্রাদার্সের বিপক্ষে ৪৯ রানে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন রিশাদ। যা ছিল পঞ্চাশ ওভারের স্বীকৃত ক্রিকেটে তার সেরা বোলিং। বলার অপেক্ষা রাখে না, ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় ৪টি উইকেটই অতি গুরুত্বপূর্ণ।
২০তম ওভারে কেসি কার্টি স্লিপে সাইফ হাসানের হাতে ক্যাচ দেন। এর আগে উইকেট কিপার সোহান ও সাইফের গ্যাপ দিয়ে একটি ক্যাচ ছুটে যায়। কিন্তু এবার সাইফ সহজেই ক্যাচ তালুবন্দি করেন।
পরের ওভারে রিশাদের শিকার ব্রেন্ডন কিং ও শেফরায়ান রাদারফোর্ড। ৬০ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৪৪ রান করেন কিং। তার লেগ ব্রেকে উইকেটের পেছনে সোহানের গ্লাভসবন্দী হন। বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হতে পারতেন রাদারফোর্ড। আক্রমণাত্মক এই ব্যাটসম্যানকেও রিশাদ টিকতে দেননি। ৩ বল খেলে রানের খাতা খুলতে না পেরে আউট হন রাদারফোর্ড।
পরের ওভারে রিশাদের ফাইফার পূর্ণ হয়ে যায়। এবার তার ঘূর্ণি, বাউন্সে পরাস্ত রোস্টন চেজ। সোহানের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৬ রান করা চেজ।
৯২ রানে ৫ উইকেট হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৫টি উইকেটই পেয়েছেন রিশাদ।
ব্রেক থ্রু পেল বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সতর্ক
১২তম ওভারে বাংলাদেশকে কাঙ্খিত ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। দারুণ এক ঘূর্ণিতে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আথানাজকে এলবিডব্লিউ করেন রিশাদ। ৩৬ বলে ২৭ রান করেন ক্যারিবীয় ওপেনার। উইকেটে নতুন ব্যাটসম্যান কেসি কার্টি।
ঝড়ো শুরু পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
তাসকিন ও তানভীরের প্রথম দুই ওভার ছিল মেডেন। কিন্তু পরের তিন ওভারেই ঝড় তোলেন দুই ওপেনার ব্রেন্ডন কিং ও অ্যালিক আথানাজে। অনায়েসে পেয়েছেন বাউন্ডারির স্বাদ। চতুর্থ ওভারে তানভীরকে তিন চার ও এক ছক্কা হাঁকান আথানাজে। তৃতীয় ওভারে কিং তাসকিনকে একটি চার ও ছক্কা উড়ান।
ব্যাটিং এই ধারাবাহিকতা ছিল পরেও। বাংলাদেশের স্পিনার, পেসারদের কোনো সুযোগ না দিলে অনায়েসে ব্যাটিং করছেন তারা। বোলিংয়ে তেমন ধারও নেই। ফলে সহজেই রান তুলতে পারছেন ওপেনাররা।
পাওয়ার প্লে’তে ১০ ওভারে বিনা উইকেটে তাদের রান ৪৫। জয়ের জন্য ৪০ ওভারে তাদের করতে হবে ১৬৩ রান।
আজও বাংলাদেশ পারল না ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের লক্ষ্য ২০৮
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের কোনোটিতেই বাংলাদেশ পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেনি। আগেইভাগেই ইনিংস গুটিয়ে গিয়েছিল। দলের পরবর্তী লক্ষ্য ছিল পুরো ইনিংস ব্যাটিং করা।
কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ করতে ব্যর্থ মেহেদী হাসান মিরাজের দল। আজও ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেনি দল। তবে কাছাকাছি গিয়েছে। মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আমন্ত্রণে ব্যাটিং নেমে ৪৯.৪ ওভারে অলআউট বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে পুঁজি কেবল ২০৭ রান। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি জিততে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ২০৮ রান।
শেষ দিকে রিশাদের ব্যাটে বাংলাদেশের রান দুইশ পেরিয়ে যায়। ১৩ বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে ২৬ রান করেন রিশাদ। এছাড়া তানভীরের ব্যাট থেকেও আসে ১ ছক্কা। সোহান ১০ বলে ৯ রানের বেশি করতে পারেনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা বোলার ছিলেন জেডেন সিলস। ৪৮ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। ২টি করে উইকেট নেন গ্রেভস ও চেজ।
১৮৩ ডট বল
এমনিতেই পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেন বাংলাদেশ। উল্টো ১৮৩ বল ডট খেলেছে।
কতদূর যাবে বাংলাদেশ
মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন পঞ্চম উইকেটে ৫৫ বলে ৪৩ রানের জুটি গড়েছিলেন। তাদের জুটিতে ইনিংসের শেষে কিছুটা রানের আশায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৭ রানের ব্যবধানে থিতু হওয়া দুই ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরলে আবার চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
মিরাজ স্লগ সুইপ করে ১৭ রানে আউট হন। অভিষিক্ত মাহিদুলের সুযোগ ছিল ফিফটি ছোঁয়ার। কিন্তু ৪৬ রানে তাকে আউট করেন চেজ। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বল মিস করে মাহিদুল বোল্ড হন। ৭৬ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৪৬ রান করেন তিনি।
দেড়শ পেরিয়ে বাংলাদেশ
স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের রান দেড়শ পেরিয়েছে। ৪২ ওভার শেষে রান ৪ উইকেটে ১৫২।
বাংলাদেশ দলীয় ফিফটি পেয়েছিল ৯৭ বলে। পঞ্চাশ থেকে একশতে যেতে লেগেছিল ৮২ বল। এবার একশ থেকে দেড়শতে যেতে লাগল ৭২ বল। ইনিংসে আরো ৮ ওভার বাকি আছে। ক্রিজে আছেন মিরাজ ও মাহিদুল। কত করতে পারবে বাংলাদেশ?
ফিফটি তুলে আউট তাওহীদ
ক্যারিয়ারের ১১তম ফিফটি তুলে বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না তাওহীদ হৃদয়। মন্থর ইনিংসটি থামে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। ৯০ বলে ৩ চারে ৫১ রান করেন তাওহীদ।
৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া বাংলাদেশকে উদ্ধারে মাঠে নামেন তাওহীদ। তৃতীয় উইকেটে শান্তকে নিয়ে ৭১ এবং চতুর্থ উইকেটে মাহিদুল ইসলামকে ৩৬ রানের জুটি গড়েন তাওহীদ। এ সময়ে ৮৭ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি। কিন্তু ১ রান যোগ করতে পেসার গ্রেভসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তাওহীদ।
উইকেটে মাহিদুলকে নিয়ে ব্যাটিং করছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
প্রতিরোধ গড়ে ফিরলেন শান্ত
৮ রানেই ২ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন শান্ত ও হৃদয়। তাদের দুজনের ব্যাটে ভর করে ২২ ওভার শেষে ৭৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। কিন্তু খারি পিয়েরের করা ২৩তম ওভারের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান শান্ত। ৬৩ বল খেলে ৩ চারে ৩২ রান আসে তার ব্যাট থেকে। হৃদয় ৩৬ রানে অপরাজিত আছেন। তার সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।
পাওয়ার প্লে’তে ৩৩ রানে ২ উইকেট হারাল বাংলাদেশ
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৩ রান তুলেছে স্বাগতিকরা। মাত্র ১ বলের ব্যবধানে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার।
দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে রোমারিও শেফার্ডের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন সাইফ। তিনি ৬ বল খেলে ৩ রান করেন। এরপর তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই জাইডেন সিলসের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রোস্টন চেজের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন সৌম্য। ১ চারে ৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয় মিলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছেন। শান্ত ১১ ও হৃদয় ১৩ রানে ব্যাট করছেন।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, অঙ্কনের অভিষেক:
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে আজ শনিবার মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইতোমধ্যে টস হয়েছে। টস জিতেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক শেই হোপ। তিনি অবশ্য বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টস হেরে ব্যাটিং করবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের একাদশে একজন পেসার, তিনজন স্পিনার ও সাতজন ব্যাটসম্যান রয়েছে। এই ম্যাচে অভিষেক হচ্ছে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শেই হোপ টস জিতে বলেছেন, “আমরা আগে বোলিং করতে চাই। এবার বোলারদের দিয়েই শুরুটা করব। টেস্ট সিরিজ শেষ করে এই সিরিজের প্রস্তুতির সময়টা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গত কয়েক মাস বেশ ব্যস্ত কেটেছে। তাই এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো দ্রুত মানিয়ে নেওয়া। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব অল্প সময়েই পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তারপর সেটা মাঠে কাজে লাগাতে হয়। সিরিজটা ভালোভাবে শুরু করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’
দলের মনোবল নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে আমরা যে ছন্দে খেলেছিলাম, সেটাই ধরে রাখতে চাই। শেষ সিরিজে পাকিস্তানকে হারিয়েছিলাম। যাদের বিপক্ষে আমরা অনেকদিন জয় পাইনি। সেই সাফল্য গোটা দলকে আত্মবিশ্বাসী করেছে। এবারও আমরা চাই সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বিদেশের মাটিতে ভালো সূচনা করতে এবং প্রতিপক্ষকে কঠিন চ্যালেঞ্জ দিতে।’’
আজকের ম্যাচে দলের সমন্বয় নিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের দলে তিনজন পেসার আর তিনজন স্পিনার আছে। অর্থাৎ সব দিকই আমরা প্রস্তুত রেখেছি।”
বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ বলেছেন, “আমরাও ব্যাটিং দিয়ে শুরু করতাম। এটা আমাদের ঘরের মাঠ, উইকেট সম্পর্কে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি, তবে প্রতিটি ম্যাচই নতুন। আমি আশা করি, সবাই নিজের ভূমিকা ভালোভাবে বুঝে ইতিবাচকভাবে তা গ্রহণ করবে। মাঝেমধ্যে খারাপ পারফরম্যান্স আসতেই পারে। কিন্তু আমরা সবাই জানি আজ নতুন দিন, তাই সবাই যেন আগের চেয়ে ভালো খেলার চেষ্টা করে।’’
একাদশ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দলে দুইজন পেসার, তিনজন স্পিনার এবং সাতজন ব্যাটার আছে।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ:
ব্র্যান্ডন কিং, অ্যালিক আথানাজে, কেসি কার্টি, শেই হোপ (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), শারফান রাদারফোর্ড, জাস্টিন গ্রেভস, রস্টন চেজ, রোমারিও শেফার্ড, গুডাকেশ মোতি, খারি পিয়েরে ও জেডেন সিলস।
বাংলাদেশ একাদশ:
সৌম্য সরকার, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, নুরুল হাসান (উইকেটরক্ষক), রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, তানভির ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান।