আন্তর্জাতিক ডেস্ক || চীনের সামরিক বাহিনীতে শুরু হয়েছে বিরল শুদ্ধি অভিযান। দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি একযোগে বরখাস্ত করেছে নয়জন শীর্ষ জেনারেলকে, যাদের মধ্যে রয়েছেন সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা। এটিই দেশটিতে কয়েক দশকের মধ্যে সামরিক বাহিনীর মধ্যে অন্যতম বড় অভিযান।
চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মারাত্মক আর্থিক অপরাধের অভিযোগে এই নয় জেনারেল সন্দেহভাজনের তালিকায় রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই তিন তারকা জেনারেল এবং পার্টির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগ্রহণকারী সংস্থা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। খবর বিবিসি বাংলার।
এই বরখাস্ত দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের অংশ হলেও বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, এটি রাজনৈতিক শুদ্ধিকরণেরও একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।
যে নয় জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে, তারা হলেন— সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের (সিএমসি) ভাইস চেয়ারম্যান হি ওয়েইডং, সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের পরিচালক মিয়াও হুয়া, একই বিভাগের নির্বাহী উপপরিচালক হে হংজুন, জয়েন্ট অপারেশন কমান্ড সেন্টারের নির্বাহী উপপরিচালক ওয়াং জিউবিন, ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডার লিন জিয়াংইয়াং, সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার কিন শুতং, নৌবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার ইয়ুআন হুয়াজি, রকেট ফোর্সেস কমান্ডার ওয়াং হৌবিন এবং আর্মড পুলিশ ফোর্স কমান্ডার ওয়াং চুনিং।
এই তালিকার মধ্যে হি ওয়েইডং চীনা সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পর তিনিই সিএমসির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। গত মার্চে সর্বশেষ প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল তাকে। এরপর থেকে জনসম্মুখে অনুপস্থিতির কারণে জল্পনা ছিল যে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ ফোরাম পলিটব্যুরোতেও সদস্য ছিলেন এবং পলিটব্যুরোর প্রথম সদস্য হিসেবে এ ধরনের অভিযানে তদন্তের মুখে পড়লেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা দলের শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে ভঙ্গ করেছেন এবং দায়িত্বসংশ্লিষ্ট গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার সন্দেহ রয়েছে। তারা বর্তমানে সামরিক আদালতের বিচারের মুখোমুখি এবং এই অভিযানকে দল ও সামরিক বাহিনীর দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টার একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ফেলো নেইর থমাস বিবিসি চাইনিজকে বলেন, শি জিনপিংয়ের এই শুদ্ধিকরণ অভিযান মূলত ক্ষমতা সংহত করার কৌশল। তার মতে, শি দুর্নীতিপরায়ণ ও অবিশ্বস্ত কর্মকর্তাদের অপসারণের মাধ্যমে পার্টিকে আরও সুশৃঙ্খল, কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় টিকে থাকার উপযোগী করতে চাইছেন।
তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এই শুদ্ধিকরণ শাসনব্যবস্থাকে আরো কঠোর করে তুলতে পারে। এখন দৃষ্টি থাকবে ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া পার্টির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে কারা অংশ নিচ্ছেন তার দিকে।