আন্তর্জাতিক ডেস্ক || যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে দূপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়ার আশায় শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) হোয়াইট হাউজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রতি দেননি ট্রাম্প, ফলে হোয়াইট হাউজ থেকে জেলেনস্কি খালি হাতেই ফিরেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এখন ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ নয়, বরং যুদ্ধ শেষ করার উদ্যোগে বেশি আগ্রহী।
হোয়াইট হাউজে সৌহার্দ্যপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর জেলেনস্কি জানান, তিনি এবং ট্রাম্প দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু ‘যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু উত্তেজনা বাড়াতে চায় না’, তাই তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না। বৈঠকের পর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে কিয়েভ ও মস্কোকে যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান জানান।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং শিগগিরই হাঙ্গেরিতে তার সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে সম্মত হোন। এর একদিনই পরই ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। জেলেনস্কির বিশ্বাস, রাশিয়ার তেল ও জ্বালানি স্থাপনায় টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করলে পুতিনের যুদ্ধ অর্থনীতি মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে।
ট্রাম্প যদিও এটি উড়িয়ে দেননি, তবে শুক্রবার হোয়াইট হাউজে তার সুর ছিল অপ্রতিশ্রুতিপূর্ণ। বিবিসিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আশা করি ইউক্রেনের এটির প্রয়োজন হবে না, আমরা টমাহকদের কথা না ভেবেই যুদ্ধ শেষ করতে সক্ষম হবো।”
বৈঠকে জেলেনস্কি গাজা শান্তি চুক্তির প্রথম পর্যায়ের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তার প্রত্যাশা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে থামাতেও একই গতিতে কাজ করবেন।
জেলেনস্কের কাছে এক সাংবাদিক জানতে চান, হাঙ্গেরিতে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে কোনো চুক্তিতে হতে পারে বলে তিনি মনে করেন কিনা। জবাবে জেলেনস্কি বলেন, “আমি জানি না। তবে ইউক্রেনের হাতে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র থাকার সম্ভাবনায় রাশিয়া ‘ভয় পেয়েছে’। কারণ এটি একটি শক্তিশালী অস্ত্র।”
ওয়াশিংটনে বৈঠক শেষে তিনি কি আরো আশাবাদী যে ইউক্রেন টমাহক পাবে, এই প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কি বলেন, “আমি বাস্তববাদী।”
ইউক্রেনে ফেরার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের জন্য বৈঠকের বিস্তারিত নিয়ে তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। পোস্টে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “এখন প্রধান অগ্রাধিকার হলো যতটা সম্ভব জীবন রক্ষা করা, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ইউরোপে আমাদের সবাইকে শক্তিশালী করা।”
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপকে ‘ফলপ্রসূ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, যুক্তরাজ্য ইউক্রেনে মানবিক ও সামরিক সহায়তা প্রেরণ অব্যাহত রাখবে।
কিছুদিন আগে ট্রাম্প ইউক্রেনের কাছে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে এরপরপরই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন সতর্ক করে বলেছিলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ মার্কিন-রাশিয়ার সম্পর্ককে আরো চাপে ফেলবে।”
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জানান, পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের সময় ‘দুর্দান্ত অগ্রগতি’ হয়েছে। হাঙ্গেরিতে তারা মুখোমুখি আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছেন। জেলেনস্কি এই আলোচনায় অংশ নেবেন কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিকদেরকে ট্রাম্প বলেন, পুতিন এবং জেলেনস্কির মধ্যে ‘খারাপ সম্পর্ক’ রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা সবার জন্য এটি আরামদায়ক করতে চাই। আমরা তিনজন আলোচনায় বসবো, তবে সেটি আলাদা করে হতে পারে।” তবে তার মতে, যুদ্ধের অবসানে তিন নেতাকে ‘একত্রিত হতে হবে’।