1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Golam Saroar : Golam Saroar
রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন - দৈনিক প্রথম ডাক
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন

রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন

রিপোর্টারের নাম :
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৩৩ বার দেখা হয়েছে
বাবা-মায়ের সঙ্গে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সালমান ফারসী বুলু

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি || রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সালমান ফারসী বুলু নামে এক মাদরাসা শিক্ষার্থী। তার এমন সাফল্যে আনন্দিত পরিবারসহ স্থানীয়রা। অভাব-অনটনের কারণে অদম্য এই মেধাবী শিক্ষার্থীর রঙ যাতে হারিয়ে না যায় সেই চিন্তায় আছেন তারা।

ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধণিরাম গ্রামের দিনমজুর আবেদ আলী ও দুলালী দম্পতির সন্তান সালমান। এক বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি।

আট শতক জমিতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন সালমান। দিনমজুরের কাজে চলে সংসার। স্থানীঢ শাহবাজার এ.এইচ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদারসা থেকে আলিম পরিক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন সালমান।

সালমান বলেন, “নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বুঝতে পারি দাখিল পরীক্ষায় ফরম ফিলাপের টাকা জোগার করতে না পারলে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের এখানে অনেক মেধাবী ছেলেকে দেখেছি, অর্থ সংকটের কারণে পড়ালেখা ছেড়ে কায়িক শ্রম দিচ্ছেন। তারা পড়ালেখায় ফিরে আসতে পারেননি। এজন্য নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় শিক্ষকদের না জানিয়ে প্রায় এক বছরের জন্য জেলার বাইরে কাজ করতে যাই।”

তিনি বলেন, “ঢাকা ও কুমিল্লার বিভিন্ন বাড়িতে এবং ভবনে রাজমিস্ত্রির সহযোগী (জোগালী) হিসেবে কাজ করেছি। টাকা জমিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি। পরে সেই টাকায় দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরর্ণ করে পরীক্ষা দেই। দাখিলে জিপিএ-৫ পাই। এরপর আবারো পড়ালেখা খরচ জোগাতে বিভিন্ন সময় এলাকায় এবং ঢাকায় রাজমিস্ত্রির সহযোগীর কাজ করেছি। এক বছর আগে টাকা জমিয়ে বাড়িতে ফেরার পর পড়ালেখায় মনোযোগ দেই। এ কারণে কাজের জন্য আর ঢাকায় যাওয়া হয়নি।”

“শিক্ষকরা আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। তারা সহযোগিতা না করলে এত দূর আসতে পারতাম না। দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার পর এবার আলিমেও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি”, যোগ করেন তিনি।

ফয়সাল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং-এ ভর্তি হয়েছি। ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে পরে মেডিকেলেও পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমার দরিদ্র পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।”

সালমানের মা দুলালী বেগম বলেন, “সবাই বলতেছিল, ছেলে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। এখন আরো পড়াতে হবে। মাদরাসার শিক্ষকরা সবাই বাড়িতে এসেছিল। আমাদের কোনো টাকা নাই। তাকে কোচিং এ ভর্তির জন্য একটা খড়ের গাদা ছিল সেটা ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এনজিও থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি।”

সালমানের ভাই দুলু মিয়া বলেন, “পরিবারে অর্থকষ্টের কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমি পড়ালেখা করতে পেরেছি। সালমান খুব মেধাবী। আমার ছোট ভাই নিজের চেষ্টায় রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমার ছোট ভাই যাতে পড়ালেখা করতে পারে, সে জন্য যতটুকু পারছি সহযোগিতা করছি। সামর্থবানরা এগিয়ে আসলে আমার ছোট ভাইটি দুশ্চিন্তা ছাড়াই পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে।”

সালমানের বাবা আবেদ আলী বলেন, “আমার বয়স হয়েছে, এখন আগের মতো কাজ করতে পারি না। অনেক কষ্টে সংসার চলছে। আগে যা ছিল সব শেষ। এখন সবাই সহযোগিতা করলে ছেলেটা পড়তে পারবে।”

ফুলবাড়ী উপজেলার শাহবাজার এ.এইচ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম মিয়া বলেন, “গত বছর আমাদের মাদরাসা থেকে সালমান দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। এবার আলিম পরীক্ষায় আবারো জিপিএ-৫ পেয়ে চমকে দিয়েছে তিনি। তার রেজাল্টে আমরা খুশি। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া মেধাবী এই ছেলেটির স্বপ্ন পুরর্ণে বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed By: SISA IT