পটুয়াখালী (উপকূল) প্রতিনিধি || পটুয়াখালী রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার বিরুদ্ধে সালিশের নামে ৫ যুবকের মাথা ন্যাড়া করার অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে ইউনিয়নের মধ্য চতলাখালী গ্রামে প্রায় শতাধিক মানুষের সামনে ওই যুবকদের মাথা ন্যাড়া করানো হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মধ্য চতলাখালী গ্রামের মনির গোলদার ও মোজাম্মেল মৃধার মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত শুক্রবার দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং হাতাহাতি হয়। এসময় বাবার সঙ্গে মিলে মনিরকে লাঞ্ছিত করেন মোজাম্মেলের ছেলে রিয়ান। এরই জেরে গত শনিবার রাতে মনির গোলদারের ছেলে রাব্বি ও রিয়ান তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে রাব্বি রিয়ানকে মারধর করে।
রিয়ানকে মারধরের ঘটনাটি তার বাবা মোজাম্মেল স্থানীয় ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফাকে জানান। পরদিন সকালে ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার উপস্থিতিতে মধ্য চতলাখালীর খুতির বাজার এলাকায় সালিশ বসে। সেখানে দুই পক্ষসহ স্থানীয় লোকজনকে ডেকে এনে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ যুবকের মাথা ন্যাড়া করার নির্দেশ দেন। একপর্যায় নর সুন্দর ডেকে এনে তাদের থেকে মাথা ন্যাড়া করে দেন।
এ ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, লাঠি হাতে রেশাদ খলিফা দাঁড়িয়ে রয়েছেন, নরসুন্দর যুবকদের মাথা ন্যাড়া করছেন।
ভুক্তভোগী নয়ন সরদার বলেন, “আমি তো কোন অপরাধ করিনি। রাব্বি ও রিয়ানের মারামারি ছাড়িয়ে দিয়েছি। তারপরও মেম্বর ফোন করে আমাকে ডেকে নিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দিছে।”
নয়ন সরদারের মা ঝর্ণা বেগম বলেন, “আমি মানুষের কাছে শুনে ঘটনাস্থলে যাই। আমি অভিভাবক, আমিতো আছি। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করলে আমাকে ডাকতো। সে তো কোরো অপরাধ করেনি। মারামারি দেখে থামিয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, মেম্বার বিনা অপরাধে আমার ছেলের মাথা কামিয়েছেন।”
অপর ভুক্তভোগী রাব্বি বলেন, “রিয়ান ভাইর সঙ্গে আমার মারামারি হয়েছে। রেশাদ মেম্বার এসে চৌরাস্তায় (খুতির বাজার) সালিশ করে দিছেন। ওর (রিয়ান) এবং আমারসহ পাঁচজনের চুল কেটে দিছে। ওরা (তিনজন) মারেনি, ওদেরও চুল কেটে দিছে।”
রাব্বির মা মাহফুজা বলেন, “জমিজমা নিয়ে ঝামেলায় রাব্বির বাবাকে মারধর করেছে রিয়ান ও তার বাবা। এটা কোন ছেলে মেনে নিতে পারে? তাই রিয়ানকে এই কথা জিজ্ঞস করতে গেলে মারামারি হয়েছে। সেটা নিয়ে রেশাদ মেম্বার সবার চুল কেটে দিছে।”
রিয়ানের বাবা মোজাম্মেল মৃধা বলেন, “রাব্বির বাবা মনিরের সঙ্গে আমার যে সমস্যা হয়েছিল, তা মিটমাট হয়ে গেছে। তারপর মনিরের ছেলে এসে আমার ছেলেকে মারধর করছে। আমার ছেলেকে চার-পাঁচজনে মিলে মারছে। আমি মেম্বারের কাছে বিচার চাইছি। মেম্বার এসে বিচার করে দিছে। মাফ চাওয়াইছে। আমার ছেলেসহ সবার চুল কেটে দিছে।”
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রেশাদ খলিফার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
গ্রাম আদালতের উপজেলা কো-অর্ডিনেটর মো. ইমাম হোসেন সায়েম বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদের বাহিরে সালিশ করার সুযোগ নেই। সালিশের নামে যে ঘটনাটি শুনেছি, সেটি সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত কাজ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির এমন ক্ষমতা নেই।”
রাঙ্গাবালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম হাওলাদার বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে এবং ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, “আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”