রাঙামাটি প্রতিনিধি || রাঙামাটির রাজবন বিহারে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে দুদিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।
উদ্বোধনের পর চরকায় সুতা কেটে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর (পরার কাপড়) তৈরি কার্যক্রমের সূচনা করেন বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা মঞ্জুলিকা খীসা। এটি রাজবন বিহারের ৪৯তম কঠিন চীবর দানোৎসব।
এর আগে, বেইন ঘরে পঞ্চশীল প্রদান করেন প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এ সময় পূণ্যার্থীদের সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হয় পুরো রাজবন বিহার প্রাঙ্গণ।
রাজবন বিহারের কার্যকরী কমিটি সূত্রে জানা গেছে, রাজবন বিহারের বিশাল এলাকা জুড়ে প্রায় ২০০টি বেইন স্থাপন করা হয়েছে। এতে হাজারো নারী-পুরুষ চীবর প্রস্তুত কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। সারারাত ব্যাপী চীবর তৈরির কার্যক্রম চলবে।
বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে, দীর্ঘ আড়াই হাজার বছর পূর্বে গৌতম বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীবর তৈরির প্রচলন করেছিলেন। তিন মাস বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস শেষে আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমার মধ্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর দান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বনভান্তের অনুপ্রেরণায় ১৯৭৬ সাল থেকে বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাঙামাটি রাজবন বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে।
রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসা বলেন, ‘‘বৌদ্ধ যুগের আদলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চরকায় তুলা থেকে সুতা বের করে তাঁতে বুনে কাপড় তৈরি করা হয়। এই কাপড় বিশেষ কায়দায় সেলাই করে চীবর তৈরি করা হয়। তারপর তা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়। দান বছরের যেকোনো সময় করা যায়। কিন্তু, কঠিন চীবরদান করতে হয় আশ্বিনী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমার মধ্যে।’’
কঠিন চীবরদান উৎসবকে ঘিরে তিন পার্বত্য জেলা এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা রাজবন বিহারে এসেছেন। তারা সঙ্গে নিয়ে আসছেন কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি কৃত্রিম গাছে ঝোলানো নগদ টাকা, বই-খাতা, সুঁই-সুতাসহ নানা দানসামগ্রী। এটিকে তারা ‘কল্প তরু’ বলে ডাকেন। অনেকে দল বেঁধে বাদ্য বাজিয়ে, বৌদ্ধ ধর্মীয় সংগীত গেয়ে বিহার প্রাঙ্গণে এসেছেন। রাতব্যাপী বুদ্ধ নাটক, পালা কীর্তন নানান অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে বিহার প্রাঙ্গণে। দুদিনের অনুষ্ঠানে লাখো পূণ্যার্থী অংশগ্রহণ করবেন। এই উৎসব ঘিরে বিহার প্রাঙ্গণ জুড়ে গ্রামীণ মেলা বসেছে।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। পুরো অনুষ্ঠান ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠান ঘিরে কোনো নাশকতার আশঙ্কা নেই।’’
আগামীকাল শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে বৌদ্ধ সাধকদের চীবর দান এবং সন্ধ্যায় হাজার বাতি উৎসর্গের মাধ্যমে এই উৎসব শেষ হবে।