আন্তর্জাতিক ডেস্ক || যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ক্রমবর্ধমান ও অবৈধ হুমকি’ মোকাবিলার জন্য তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন (ওপেক)-এর সহায়তা চেয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবার (৩০ নভেম্বর) প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর এই জোটের সদস্যদের কাছে লেখা এক চিঠিতে মাদুরো অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম ভেনেজুয়েলার তেল মজুদ ‘দখল’ করার চেষ্টা করছে।
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম টেলেসুরে প্রকাশিত চিঠির অনুলিপি অনুসারে, মাদুরো বলেন, “এই আগ্রাসন ঠেকাতে আপনাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা আমি আশা করি। এটি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারের ভারসাম্যের জন্য গুরুতর হুমকি তৈরি করছে, তা হোক উৎপাদক কিংবা ভোক্তা দেশ।’
মাদুরো ওপেক এবং বৃহত্তর জোট ওপেক প্লাস- উভয়ের কাছে ‘ভেনেজুয়েলার ভূখণ্ড, জনগণ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণঘাতী সামরিক শক্তি ব্যবহারের’ বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।
ভেনেজুয়েলার কাছে বিশ্বের সর্বাধিক (আনুমানিক ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল) তেলের মজুদ থাকা সত্ত্বেও, দেশটি ২০২৩ সালে মাত্র ৪.০৫ বিলিয়ন ডলারের অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করেছিল। অন্যান্য প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর তুলনায় যা অনেক কম। ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্সির সময় আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এর কারণ।

ইরান, ইরাক, কুয়েত ও সৌদি আরবের পাশাপাশি ভেনেজুয়েলা ১৯৬০ সালে ওপেকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশগুলোর একটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটির সদস্যরা তেল সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ এবং বৈশ্বিক তেলের দামে প্রভাব বিস্তারে যৌথভাবে কাজ করে আসছে।
ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনী মোতায়েন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে ‘ভেনেজুয়েলার আকাশপথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ’ বলে ঘোষণা দেওয়ার একদিন পরই মাদুরোর চিঠিটি সামনে এসেছে।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) ট্রুথ সোশ্যালে করা এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “সব এয়ারলাইন্স, পাইলট, মাদক ব্যবসায়ী এবং মানব পাচারকারীদের উদ্দেশ্যে বলছি, অনুগ্রহ করে ভেনেজুয়েলার উপরের এবং আশপাশের আকাশসীমাকে পুরোপুরি বন্ধ বলে বিবেচনা করুন।”
কারাকাস ট্রাম্পের এই বিবৃতিকে ‘ঔপনিবেশিক হুমকি’ বলে অভিহিত করেছে।
মাদুরোর সরকার কয়েক মাস ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, ট্রাম্প প্রশাসন ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ভেনেজুয়েলার তেল ও গ্যাস সম্পদ দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তবে হোয়াইট হাউজের দাবি, মার্কিন বাহিনী মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। যদিও সমালোচকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের নিজস্ব তথ্য দেখায় যে ভেনেজুয়েলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আগত মাদকের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস নয়।
ট্রাম্পের নির্দেশে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানগুলোতে হামলা চালাচ্ছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৮৩ জন নিহত হয়েছেন।মানবাধিকার কর্মীরা এই হামলাগুলোকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকারী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে নিন্দা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সামরিক উপস্থিতি মোতায়েন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী, ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড, অন্যান্য যুদ্ধজাহাজ, হাজার হাজার সেনা এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান।