1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Golam Saroar : Golam Saroar
দশিক্ষার্থীদের মতো ক্লাস ফাঁকি দেন শিক্ষকরাও - দৈনিক প্রথম ডাক
বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০৬ অপরাহ্ন

দশিক্ষার্থীদের মতো ক্লাস ফাঁকি দেন শিক্ষকরাও

বরগুনা প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ১২ বার দেখা হয়েছে
বরগুনার গ্রাম অঞ্চলের বেশিরভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তালাবদ্ধ থাকে।

বরগুনা প্রতিনিধি || যখন ক্লাস চলার কথা, তখন বরগুনার গ্রাম অঞ্চলের বেশিরভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকে তালাবদ্ধ। কোন কোন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি হাতে গোনা ৪ থেকে ৫ জন। এমন অবস্থায় বেহাল হয়ে পড়েছে শিক্ষা জীবনের সব থেকে মূল্যবান স্তর প্রাথমিক শিক্ষা। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় বন্ধই থাকে সরকারি এসব বিদ্যালয়।

বরগুনা সদরের চর মাইঠা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।‌ সরকারের দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী এই বিদ্যালয়ে পাঠদান চলার কথা থাকলেও বিদ্যালয়টি বেশিরভাগ দিন পাঠদানের সময় থাকে তালাবদ্ধ। নেই কোন শিক্ষক, নেই শিক্ষার্থী।

স্থানীয়রা বলছেন, বেশিরভাগ সময় হাতেগোনা যে কয়েকজন শিক্ষার্থী আসেন, তাদের ছুটি দিয়ে শিক্ষকরা বাড়ি চলে যান।

চর মাইঠা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খালের ওপারেই ৪৫ বছর ধরে বসবাস করেন সুলতান মিয়া। তিনি বলেন, “স্যারদের মন চাইলে স্কুলে আসেন, মনে না চাইলে আসেন না। আমরা বেশিরভাগ সময়ে দেখি স্কুলে তালা দেওয়া। শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকরাও ফাঁকি দেয় স্কুল।”

বিদ্যালয়ের সামনেই এক বৃদ্ধ দোকানী বসেন। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সরকারের নিয়ম অনুযায়ী এখানে ক্লাস হয় না। স্যারদের যখন ইচ্ছে আসেন, যখন ইচ্ছে চলে যান।”

প্রতিবেদকের উপস্থিতি জানতে পেরে একের পর এক শিক্ষক বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন। তাদের দাবি, শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে চায় না, তাই বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে চলে যান তারা।

সহকারী শিক্ষক আফজাল হোসেন এবং গোলাম সগির বলেন, “আবহাওয়া খারাপ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে চায় না। তাই ছুটি দিয়েছি দুইটার দিকে।”


সকাল গড়িয়ে দুপুর হতেই বন্ধ হয়ে যায় সদরের রওশন জাকির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর পশ্চিম গিলাতলী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নানান অজুহাত দিয়ে বিদ্যালয় তালাবদ্ধ করে চলে যান।

একই চিত্র বেতাগী ও পাথরঘাটা উপজেলার অসংখ্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। কিছু বিদ্যালয় থাকে শিক্ষার্থী শূন্য আবার অনেক বিদ্যালয় থাকে বন্ধ।

বেতাগীর দক্ষিণ করুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় গোটা বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী শূন্য। দুজন শিক্ষক শিক্ষক মিলনায়তনে গল্প করছেন। শিক্ষার্থীদের মতোই এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ তিন জন শিক্ষক অনুপস্থিত।

জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম ও মৌসুমী সমাদ্দর জানান, অন্য শিক্ষকদের বিষয়ে তারা জানেন না। তবে, শিক্ষার্থীরা কোথায় জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তারা।

মুঠোফোনে প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি অফিসের কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিসে এসেছি। বাকি শিক্ষকদের স্কুলে থাকার কথা।” শিক্ষার্থী নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি এসব বিষয়ে জানি না, খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

পাথরঘাটার জালিয়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়টি তালাবদ্ধ। জালিয়াঘাটা এলাকার বাসিন্দারা জানান, কখনো কখনো বিদ্যালয় এভাবেই বন্ধ থাকে। মাঝেমধ্যে দেখি স্যারেরা আসেন। আবার দুপুর ১২টা ১টার মধ্যে ছুটি দিয়ে চলে যান।

এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে যেসব বিদ্যালয় খোলা থাকে, সেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও থাকে হাতে গোনা কয়েকজন। শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে খোড়া যুক্তি দিচ্ছেন শিক্ষকরা।

সদরের পূর্ব বদরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়- তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৭ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত, শিক্ষক আছেন তিন জন। তিন ক্লাসের সাত জন শিক্ষার্থীকে এক রুমে নিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন এক জন শিক্ষক।

শিক্ষার্থী উপস্থিতি এত কম থাকার কারণ জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক ইশরাত জাহান ইলা বলেন, “স্কুলে আসার রাস্তাঘাটা ভালো না। এছাড়াও স্কুলের পাশেই আরেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তিনটি মাদ্রাসা আছে। তাই শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক কম।”

বরগুনা সদরের গুলিশাখালী মাঝের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি প্রায় ১৫ জন। তবে প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত। জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষক ফয়সাল হোসেন জানান, প্রধান শিক্ষক কেন আসেননি তিনি জানেন না। তিনি বলেন, “চরাঞ্চলের শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে চায় না তাই উপস্থিতি কম।”

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবু জাফর মো. ছালেহ বলেন, “পাঠদান নিয়মিত করতে বন্ধ থাকা বিদ্যালয়ের তালিকা প্রস্তুত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই যেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনুপস্থিত থাকে তাদের কয়েকজনকে শোকজ করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। তাদের বেতনও কাটা হয়েছে “

বছরজুড়ে অনুসন্ধানের চিত্র ও তথ্য তাকে জানালে তিনি বলেন, “কিছু কিছু বিদ্যালয় সম্পর্কে অবগত আছি। বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শন করে যেসব বিদ্যালয়ে অনিয়ম পাওয়া গেছে তাদের তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। বাকিটা মন্ত্রণালয় দেখবেন।”

যেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ৫০ জনের কম, সেগুলো পাশের স্কুলের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। অনিয়মিত পাঠদান ও কম শিক্ষার্থী থাকা ৩০০ বিদ্যালয়ের তালিকাও করা হয়েছিল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed By: SISA IT