তানভীর আহমেদ || নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে সংকটে থাকা পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। এর ধারাবাহিকতায় ব্যাংকগুলোতে শিগগিরই প্রশাসক বসানোর প্রজ্ঞাপন জারি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভার পর সাংবাদিকদের জানান, ব্যাংকগুলো একীভূত করতে দু্ই থেকে পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শিগগিরই প্রশাসকরা ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব নেবে। ধীরে ধীরে পর্ষদ নিস্ক্রিয় হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণীত ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ’ অনুযায়ী ব্যাংকগুলো একীভূতকরণের পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যেসব ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া হিসেবে প্রশাসক বসানো হবে সেগুলো হলো- গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক।
জানা গেছে, আলোচ্য ব্যাংকগুলোর ৪৮ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ এখন খেলাপি। একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা লাগবে বলে হিসাব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরমধ্যে সরকার থেকে ২০ হাজার কোটি মূলধন জোগান দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। নতুন ব্যাংকের সম্ভাব্য নাম হবে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। নতুন এই ব্যাংকের জন্য দ্রুত লাইসেন্স ইস্যু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা হবে।
এর আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সংকটে থাকা দুর্বল পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করেছেন গভর্নর আহসান এইচ. মনসুর। বৈঠকগুলোতে অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ কর্মকর্তারা একীভূতকরণের পক্ষে সম্মতি জানিয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর বৈঠক শেষে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন জানান, আমরা একীভূতকরণে সম্মতি জানিয়েছি। কারণ গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান ঋণ স্থিতি প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এসব ঋণ সবই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
একই দিন বৈঠক ছিল ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে। ব্যাংকটি একীভূতকরণে সম্মতি জানিয়েছে। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার সঙ্গে আমাদের দ্বিমত নেই। আমানতকারীদের সুরক্ষার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবে। তিনি জানান, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক থেকে এস আলম বেনামে ৩৮ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। ব্যাংক থেকে নিজের নামে অর্থ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় বেনামি ঋণ নেওয়া হয়েছে। বেনামি ঋণের টাকা আদায় না হওয়ায় ব্যাংক এতো বিপর্যয়ে পড়েছে।