নিউজ ডেস্ক || জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণকে ‘শক্তিশালী’ ও ‘প্রাসঙ্গিক’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, তারা নিশ্চিত আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি ছাড়াও জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে দৃঢ় ও প্রাসঙ্গিক হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “এই ভাষণ শক্তিশালী ছিল। প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ে বারবার নির্বাচনের নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। আমরা নিশ্চিত যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
তিনি আরো বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে সরকারের সংস্কার এজেন্ডা এবং জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি যথাযথভাবে বলেছেন, আমাদের সরকার যে উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে তার প্রতিফলন ভাষণে প্রকাশ পেয়েছে।”
“অধ্যাপক ইউনূস বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে তার সরকার কাজ শুরু করেছে, দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি পূরণে উদ্যোগ নিয়েছে।”
বিএনপি মহাসচিব সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সফরে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক নেতাদের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এটি জাতীয় ঐক্যের প্রদর্শন এবং এজন্য আমরা আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা জানিয়েছি।”
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে প্রশংসনীয় বলে অভিহিত করে বলেন, ‘“সর্বপ্রথম কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা আন্তর্জাতিক মহলে অংশগ্রহণ করেছেন—এটি সত্যিই ব্যতিক্রম ও প্রশংসনীয় ঘটনা।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ভাষণটিকে ‘যুগান্তকারী বক্তব্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে ন্যায়বিচার, সংস্কার ও আন্তর্জাতিক একাত্মতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “বহুপক্ষীয় সহযোগিতা শক্তিশালী করতে এবং উন্নয়নশীল দেশের কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।”
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশের রূপান্তরের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “যুবসমাজ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জুলাই ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত সংস্কারের পথে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।”
তিনি প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতি, স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতার জন্য অর্থনৈতিক ও শাসন ব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, “আন্তর্জাতিক চুক্তি গ্রহণ, মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা এবং অতীতের নির্যাতন প্রতিরোধের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।”
প্রবাসী কর্মীদের অবদানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “তারা দেশের জন্য রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে যাচ্ছেন। এ অবদান দেশে ও কর্মস্থলে সমানভাবে মূল্যবান।”
তিনি রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
ইসরায়েলের গণহত্যার কঠোর নিন্দা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা গাজায় সহিংসতা বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানান। তিনি দুই রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি বাংলাদেশের অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু, যুব নেতৃত্বে উদ্ভাবন, নতুন প্রযুক্তির সমতা, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ, আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কার, প্রাকৃতিক সম্পদের ন্যায্য বণ্টন, শান্তি সংরক্ষণ, আঞ্চলিক সংস্থার পুনর্জীবন ও বহুপক্ষীয়তার সংস্কারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জামায়াত নেতা ড. নকীবুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং এনসিপির প্রথম সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যসূত্র: বাসস