কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি || উজানের ঢলের কারণে কুড়িগ্রামে দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাশাপাশি তীব্র হয়েছে নদীর ভাঙন। গত দুই দিনে দুধকুমার, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বসতভিটা হারিয়েছে শতাধিক পরিবার। তাদের অনেকে মাথা গোঁজার ঠাঁই ছাড়া অবস্থায় রয়েছেন।
ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর তীব্র স্রোতের তোরে একের পর এক ভেঙে পড়ছে পাড়। ভাঙন থেকে বাঁচতে নদীর তীর থেকে ঘরের চাল, আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে দেখা যায় স্থানীয়দের।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দুধকুমার নদে চলছে ভাঙন। রবিবার (৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এই নদে ভাঙন শুরু হয়। শুধু বানিয়াপাড়া নয়, নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লবের খাস, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জের খুদিরকুটি, কাচকোল এলাকায় তীব্র হয়ে উঠেছে দুধকুমার, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন।
এলাকাবাসী জানান, ভাঙনের কবলে পড়ে গত দুইদিনে এসব এলাকায় ভিটা হারিয়েছে শতাধিক পরিবার। হুমকিতে রয়েছে ফসলি জমি, হাট-বাজারসহ শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ভাঙনরোধে সরকারি পদক্ষেপ না থাকায় এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে বলে জানান তারা।

রবিবার রাত থেকে দুধকুমার নদী ভাঙন শুরু হয়
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের মানিক মিয়া বলেন, “হঠাৎ দুধকুমার নদে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। রবিবার রাত ১০ দিকে ভাঙন দেখা দেয় যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার সকালেও নদী তীরবর্তী মানুষজন নিজেদের ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “অনেকের ঘর ও গাছপালা নদীতে ভেসে গেছে। এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলা ভাঙনের কারণে ৫০টিরও বেশি ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন এলাকাবাসী।”
একই এলাকার সোনা মিয়া জানান, “রবিবার রাত থেকে ঘর ও আসবাবপত্র সরিয়ে অন্যের জায়গায় রাখছি। যাওয়ার জায়গা নেই। এই পরিস্থিতিতে বউ-বাচ্চা নিয়ে কী করব, কোথায় যাবো ভেবে পাচ্ছি না।”
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের আবেদ আলী বলেন, “আমার দুই বিঘা জমির আমন পানিতে তলিয়ে গেছে। যদি পানি দ্রুত নেমে যায় তাহলে ক্ষতি কম হতে পারে। যদি ৫-৬ দিন থাকে তাহলে সব সব নষ্ট হয়ে যাবে। ফসল নষ্ট হলে বড় ক্ষতির মুখে পড়ব আমি।”
যাত্রাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, দীর্ঘদিন ধরে দুধকুমারের ভাঙন চলছে। বারবার বলার পর কিছু বালু ভর্তি জিওব্যাগ বরাদ্দ দেয় প্রশাসন। তা দিয়েও ভাঙন রোধ হচ্ছে না। সবকিছু ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে নদী। আমরা চাই সরকার এখানে ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নিক।”
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, “ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হবে।”