নরসিংদী প্রতিনিধি || নরসিংদীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন আমিরগঞ্জ, শ্রীনিধি ও ঘোড়াশাল গত তিন বছর ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। জনবল সংকট ও স্টেশন মাস্টারের পদ শূন্য থাকায় এই স্টেশনগুলোর কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো যাত্রী। তারা জানান, এই স্টেশনগুলো চালু করতে কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) আমিরগঞ্জ রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, স্টেশন মাস্টারের কক্ষে তালা ঝুলছে। জানালায় বড় অক্ষরে লেখা ‘স্টেশন বন্ধ’। প্ল্যাটফর্মে নেই কর্মচাঞ্চল্য। অন্য কর্মকর্তা বা কর্মচারীদেরও দেখা মেলেনি। শুধু এই স্টেশনই নয়, একই চিত্র শ্রীনিধি ও ঘোড়াশাল স্টেশনেরও।
এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন বহু ট্রেন এই স্টেশনগুলো অতিক্রম করে। স্টেশন মাস্টর না থাকায় এবং নানামুখী সংকটের কারণে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ায় না কোনো ট্রেন। মেইন লাইনে এক মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে যাত্রী নামিয়ে চলে যায় ট্রেন। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন শিশু, নারী, বৃদ্ধ ও অসুস্থ যাত্রীরা।
আমিরগঞ্জের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘদিন স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রে ধুলো জমেছে। অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। প্ল্যাটফর্ম ও রেললাইনের ওপর গড়ে উঠেছে দোকান। ফলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, বাড়ছে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি।”
তিনি বলেন, “সরকারের অবহেলার কারণেই স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রেন না থামায় এলাকার অর্থনীতি ও যাতায়াত ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবিলম্বে বন্ধ স্টেশনগুলো চালু করতে হবে। জনবল নিয়োগ করে স্টেশন সচল করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।”

আমিরগঞ্জ রেলস্টেশনের কর্মকর্তাদের কক্ষগুলো তালাবন্ধ অবস্থায় রয়েছে
অপর বাসিন্দা রাকিবুল বলেন, “প্ল্যাটফর্মে ট্রেন থামে না। মূল লাইনে ট্রেন দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করিয়ে মুহূর্তের মধ্যে চলে যায়। ট্রেন থেকে নামা-উঠার সময় অনেকে আহত হন। আমাদের চাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশনগুলো যেন দ্রুত চালু করা হয়।”
ঘোড়াশালের ব্যবসায়ী আল আমীন সরকার বলেন, “এই স্টেশন চালু থাকলে আমাদের ব্যবসাও ভালো চলতো। এখন মানুষ অন্য স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করছেন। এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।”
শ্রীনিধি এলাকার মো. আলী নামে বয়োজ্যেষ্ঠ বলেন, “বয়স হয়েছে, দূরের স্টেশন পর্যন্ত যাওয়া কষ্টের। আগে এই স্টেশন থেকেই যাতায়াত করতাম। এখন খুবই কষ্ট হয়।”
নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের বর্তমান স্টেশন মাস্টার আব্দুল মান্নান বলেন, “লোকবল সংকটের কারণে স্টেশনগুলো বন্ধ রয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে স্টেশন মাস্টার ও অন্যান্য স্টাফ নিয়োগ করে বন্ধ স্টেশনগুলো পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেবে কর্তৃপক্ষ।”