আন্তর্জাতিক ডেস্ক || ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের সংঘাতে জড়িয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দুই দেশ আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। শুক্রবার দেশ দুটির মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার পর, উভয় দেশই যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) তিনজন পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও একজন আফগান তালেবান সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, কাতারের রাজধানী দোহায় দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যেই দোহায় পৌঁছেছে।
শুক্রবার সকালে আফগান সীমান্তের কাছে এক হামলায় সাত পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং ১৩ জন আহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করার কথা জানা যায়। পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলার একটি সামরিক শিবিরে জঙ্গিরা বিস্ফোরকবোঝাই গাড়ি দিয়ে হামলা চালায়। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের কার্যালয়ের এক বিবৃতি অনুসারে, সেনা সদস্যদের গুলিতে ৬ জঙ্গি নিহত হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল আরিয়ানা নিউজকে বলেন, “পাকিস্তান যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আক্রমণ থেকে বিরত থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত কাবুল তাদের বাহিনীকে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে।”
এদিকে, আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ ইসমাইল মাওয়াইয়া জানান, পাকিস্তান বারমাল ও উরগুন জেলায় শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিমান হামলা চালিয়েছে। তিনি হতাহতের বিস্তারিত বিবরণ দেননি। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের মুখপাত্র সৈয়দ নাসিম সাদাত বলেন, হামলায় আট স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হয়েছেন, যারা একটি ম্যাচ খেলে উরগুন জেলায় ফিরে যাচ্ছিলেন।
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কেউই বিমান হামলার বিষয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি। পাকিস্তানের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা নতুন বিমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে করা হয়েছে, আফগানিস্তানে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে নয়, যারা পাকিস্তানে আক্রমণ চালায়।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দোহায় যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনার বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি। একসময়ের মিত্র ইসলামাবাদ ও কাবুল গত সপ্তাহে ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষে জড়ায়। শুক্রবার ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার আগেই পাকিস্তান তাদের বিরোধপূর্ণ সীমান্তে বিমান হামলা চালায়।
২০২১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিদায়ের পর কাবুলে ক্ষমতায় ফিরে আসা তালেবানদের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে জঙ্গি সহিংসতা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। ইসলামাবাদ কাবুলকে পাকিস্তানে হামলা জোরদারকারী জঙ্গিদের লাগাম টেনে ধরার দাবি করার পর দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ সংঘাত শুরু হয়। ইসলামাবাদের অভিযোগ, জঙ্গিরা আফগানিস্তানের আশ্রয়ে থেকে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেন, ধারাবাহিক জঙ্গি হামলার পর আফগানিস্তানের সঙ্গে ধৈর্য হারিয়ে পাকিস্তান ‘প্রতিশোধ’ নিয়েছে, তবে সংঘাত নিরসনের জন্য আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।
তালেবান পাকিস্তানে হামলার জন্য জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আফগানিস্তান সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার, সীমান্ত উত্তেজনা উস্কে দেওয়ার অভিযোগ করেছে।
পাকিস্তান-আফগানিস্তান এর আগেও বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়ালেও, সাম্প্রতিক সংঘাত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। এটি সৌদি আরব এবং কাতারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যারা মধ্যস্থতা করছে ও লড়াই বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এই সংঘাত নিরসনে সহায়তা করতে পারেন।