আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নাইজেরিয়ার উত্তর–পূর্বাঞ্চলের বোর্নো রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠী বোকো হারামের হামলায় অন্তত ৬৩ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে নাইজেরিয়া-ক্যামেরুন সীমান্তে অবস্থিত দারুল জামাল গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন সেনা সদস্যও রয়েছেন। খবর এএফপি ও বিবিসির।
নাইজেরিয়ায় গত কয়েক বছর ধরে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের আশ্রয় শিবিরগুলো বন্ধ করে নিজেদের গ্রামে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। তবে সাম্প্রতিক এই হামলা গত কয়েক বছরের সেই উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বোর্নো রাজ্যের গভর্নর বাবাগানা জুলুম সাংবাদিকদের বলেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এই সম্প্রদায়টিকে কয়েক মাস আগে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করেছিল। এখন পর্যন্ত আমরা ৬৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছি। নিহতদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক এবং সেনা উভয়ই রয়েছেন।”
নাইজেরিয়ার বিমান বাহিনী জানিয়েছে, গ্রামে হামলার খবর পাওয়ার পর তারা অভিযান চালিয়ে ৩০ জন জঙ্গিকে হত্যা করেছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নাইজেরিয়ার উত্তর–পূর্বাঞ্চলে জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম ও প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামিক স্টেট গ্রুপের পশ্চিম আফ্রিকান শাখা তাদের হামলা বাড়িয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে।
বোর্নো রাজ্যের গভর্নর আরো বলেন, “পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনীর জনবল পর্যাপ্ত নয়। তাই ফরেস্ট গার্ডস নামে পরিচিত নবগঠিত একটি বাহিনী এ অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করতে মোতায়েন করা হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত প্রায় সাড়ে আটটার দিকে হামলা শুরু হয়। এ সময় কয়েক ডজন সশস্ত্র ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে গুলি চালায় এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মালাম বুকার নামের একজন গ্রামবাসী বলেন, সশস্ত্র ব্যক্তিরা চিৎকার করতে করতে আসে। সামনে যাকে পেয়েছে সবাইকে গুলি করতে থাকে।
হামলার সময় মালাম স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে গ্রামে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সকালে আমরা ফিরে এসে দেখি সব জায়গায় লাশ পড়ে আছে।” চলতি বছরের এপ্রিলে গভর্নর জুলুম সতর্ক করে বলেছিলেন, বোকো হারামের যোদ্ধারা ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে রাজ্যের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ দখল করার পর আবারো আক্রমণ শুরু করছে।
নাইজেরিয়ার বোর্নো রাজ্য ১৫ বছর ধরে জঙ্গি গোষ্ঠীর বিদ্রোহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, যার ফলে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে এবং ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
২০১৫ সালে বোকো হারাম তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতার সময়ে নাইজেরিয়ার বোর্নো রাজ্যের বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেছিল। তবে, পরবর্তীকালে সামরিক অভিযান চালিয়ে নাইজেরিয়া সেনাবাহিনী ও তার মিত্ররা বোকো হারামকে এই এলাকাগুলো থেকে হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়।
প্রতিবেশী নাইজার জঙ্গি গোষ্ঠীকে মোকাবিলা করার জন্য গঠিত একটি আঞ্চলিক বাহিনী থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করার পর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই আরো চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠেছে।
২০১৪ সালের এপ্রিলে বোর্নো রাজ্যের চিবোক শহর থেকে ২৭০ জনেরও বেশি স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে বোকো হারাম আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পেয়েছিল।