সাভার প্রতিনিধি || ঢাকার ধামরাইয়ে বৈধ সংযোগের আড়ালে বাইপাস লাইন তৈরি করে গ্যাস চুরির অভিযোগে মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।
কারখানাটির মালিক মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আফরোজা খান রিতা।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গাজীপুর অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আনোয়ার পারভেজ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ২টা থেকে ধামরাইয়ের ইসলামপুরে রিতার মালিকানাধীন মুন্নু সিরামিক্সের কারখানায় অভিযান শুরু করে গাজীপুর আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে আসা তিতাসের ভিজলেন্স টিম।
এসময় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি বিভিন্ন আলামত এবং মিটার জব্দ করে কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন আলামত ও নামমাত্র গ্যাসের রিডিং আসায় কারখানায় কারখানার গ্যাস চুরির বিষয়ে অভিযান শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
গোপন অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তিতাসের আঞ্চলিক ভিজিল্যান্স বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল আলীম রাসেলের নেতৃত্বে একটি দল প্রথমে কারখানায় প্রবেশ করেন। এ সময় অসহযোগিতা করেন কারখানা সংশ্লিষ্টরা।
এক পর্যায়ে চোরাই পাইপ লাইনের সন্ধান মেলে। কর্মকর্তারা বিষয়টি অবহিত করেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। এরপরই সেখানে যান তিতাসের উপ-মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এসময় তারা মুন্নু সিরামিকসের বাইপাস গ্যাস লাইনসহ ফলস আরএমএস দেখতে পান। একইসঙ্গে সেখানে একটি সরাসরি বাইপাস লাইন সনাক্ত করা হয়। যা থেকে লো প্রেসার থাকলে সরাসরি বিশাল বড় গ্যাস বুস্টার দিয়ে গ্যাস টেনে নেওয়া হতো কারখানায়।
এ ঘটনা জানাজানি হলে ঘটনাস্থলে যান গণমাধ্যমকর্মীরা। তবে তাদের কারখানায় ঢুকতে দেননি নিরাপত্তারক্ষী ও কারখানা সংশ্লিষ্টরা। তবে এসবের মধ্যেও অভিযান চলতে থাকে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে সব মালামাল জব্দ করা চলাকালে হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এসময় তিতাসের কর্মকর্তারা নিরাপত্তাহীনতায় গণমাধ্যম কর্মীদের কোন ব্রিফিং না করেই দ্রুত কারখানা থেকে নিরাপদে বের হয়ে যান। টানা ৭ ঘণ্টার এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গাজীপুর অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক( ডিজিএম) আনোয়ার পারভেজ।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির সাভার আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বকেয়ার দায়ে চারটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর সম্প্রতি বকেয়া পরিষদ সাপেক্ষে একটি সংযোগ পুনঃস্থাপন করে মুন্নু সিরামিকস কর্তৃপক্ষ।
সেই সংযোগের আড়ালে অবৈধভাবে ৪ ইঞ্চি পাইপ দিয়ে বাইপাস লাইন করে ভিন্ন পথে গ্যাস চুরি করার বিষয়টি অনুসন্ধানকালে ধরা পড়ে।
তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এলএনজি আমদানিতে সরকারের ব্যয় ছিল প্রায় ৫৪,৯৫৪ কোটি টাকা ছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ২৮.৯% বেশি। আমদানিকৃত সেই গ্যাসই শিল্পে সরবরাহ করা হয়।
তিনি বলেন, “এভাবে গ্যাস চুরি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। আমরা এখন নিরূপণ করব কী পরিমাণ গ্যাস চুরি করা হয়েছে তারপর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে জরিমানা ধার্য করা হবে।”
এ ব্যাপারে মুন্নু সিরামিকস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি কেউই।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিরামিক খাতের কোম্পানি মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আফরোজা খান রিতা। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শেয়ার দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসে মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ১৯৮৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় মুন্নু সিরামিক।
সর্বশেষ গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর কোম্পানিটি প্রায় ৮৩ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা।