1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Golam Saroar : Golam Saroar
গাজীপুরে ফুটল ফুটি কার্পাস: মসলিন পুনরুদ্ধারে সম্ভাবনার দ্বার খুলছে - দৈনিক প্রথম ডাক
বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২৩ অপরাহ্ন

গাজীপুরে ফুটল ফুটি কার্পাস: মসলিন পুনরুদ্ধারে সম্ভাবনার দ্বার খুলছে

গাজীপুর (পূর্ব) প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৯ বার দেখা হয়েছে
মসলিন কাপড় তৈরিতে যে সূক্ষ্ম সুতার প্রয়োজন হতো, তার মূল উৎস ছিল ফুটি কার্পাসের তুলা

গাজীপুর (পূর্ব) প্রতিনিধি || গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় অবস্থিত তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজবর্ধন খামারে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিলুপ্তপ্রায় ফুটি কার্পাস গাছ। দীর্ঘদিন আগে হারিয়ে যাওয়া এই গাছের পুনরায় বিকাশ বাংলার ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করছে। মসলিন কাপড় তৈরিতে যে সূক্ষ্ম সুতার প্রয়োজন হয়, তার মূল উৎস ছিল এই ফুটি কার্পাসের তুলা।

প্রাচীন রোমান সাহিত্যিক পেট্রোনিয়াস মসলিনকে বলেছিলেন ‘হাওয়ায় বোনা কাপড়’। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙের চোখে এটি ছিল ‘ভোরের কুয়াশায় বোনা এক বিস্ময়‘। সেই অতুলনীয় কাপড়ের মূলে যে তুলার জাদু লুকিয়ে ছিল, তা পুনরুদ্ধার হয়েছে শ্রীপুরের গবেষণা খামারে।

বিজ্ঞানলেখক আবদুল গাফফার রনির মাধ্যমে ফুটি কার্পাসের উপস্থিতির তথ্য ছড়িয়ে পড়লে গবেষকরা জানতে পারেন, কৃষক তাজউদ্দিনের বাড়ি ছাড়াও শ্রীপুরের সরকারি গবেষণা খামারেই চলছে চারটি ভিন্ন জাতের চাষ।

কটন অ্যাগ্রোনমিস্ট মো. আবদুল ওয়াহাব জানিয়েছেন, গাজীপুরের কাপাসিয়া, দিনাজপুর, বাগেরহাট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম—এই চার অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা চার জাতের ১৬০টি চারা গত বছরের ২৯ আগস্ট পরীক্ষামূলকভাবে খামারে রোপণ করা হয়। এক বছরের ব্যবধানে গাছগুলো মানুষের উচ্চতার দ্বিগুণ হয়ে ক্ষুদ্র বৃক্ষের আকার ধারণ করেছে। সকালে ফ্যাকাশে হলুদ আর দুপুরে গোলাপি রঙে রূপ বদলানো ফুল, শক্ত বাকল এবং তুলাভরা গুটি গবেষকদের উৎসাহ আরো বাড়িয়েছে।

কিছু গাছ বছরে দুই বার ফুল দেয় বলেও জানিয়েছেন ওয়াহাব। তার ভাষায়—“ফুটি কার্পাস প্রায় ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এর আঁশ খাটো হলেও অতি সূক্ষ্ম, উজ্জ্বল ও টেকসই, যা মসলিন তৈরির জন্য একেবারে আদর্শ।”

একসময় মেঘনা-শীতলক্ষ্যা নদীর তীরঘেঁষা অঞ্চলে এই গাছের ব্যাপক বিস্তার ছিল। এমনকি গাজীপুরের কাপাসিয়া নামটিও এসেছে ‘কার্পাস’ বা তুলা থেকে। কিন্তু, সময়ের ব্যবধানে এই গাছ বিলুপ্তির মুখে পড়লে তাঁত বোর্ডের মসলিন পুনরুদ্ধার প্রকল্প বড় বাধার সম্মুখীন হয়। পরে স্থানীয় পর্যায়ে প্রচার চালিয়ে রাঙামাটি ও কাপাসিয়া থেকে মোট ৩৮টি ফুটি কার্পাস সংগ্রহ করা সম্ভব হয়, যা বর্তমানে গবেষণার আওতায় পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে।

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তা আ ন ম জহির উদ্দিন বলেছেন, “সংরক্ষণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরিচর্যার মাধ্যমে ফুটি কার্পাস আবারও কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত হতে পারে। ভবিষ্যতে এর বাণিজ্যিক চাষের পথও খুলে যেতে পারে।”

এই বিরল গাছের পুনর্জাগরণে শ্রীপুরের তুলা গবেষণা খামার এখন ঐতিহ্যপ্রেমী, গবেষক ও তাঁত শিল্প সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নতুন প্রত্যাশার কেন্দ্র হয়ে উঠছে। বাংলার হারানো মসলিনের জৌলুস ফিরিয়ে আনার পথে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, এমনটাই মত গবেষকদের।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed By: SISA IT