1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Golam Saroar : Golam Saroar
মন্দির নির্মাণে ১৩৬ কোটি টাকা দান, অভিনেত্রীর আধ্যাত্মিক জীবন - দৈনিক প্রথম ডাক
বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন

মন্দির নির্মাণে ১৩৬ কোটি টাকা দান, অভিনেত্রীর আধ্যাত্মিক জীবন

বিনোদন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৪ বার দেখা হয়েছে

বিনোদন ডেস্ক || ভারতীয় সিনেমার প্রবীণ অভিনেত্রী কাঞ্চনা। ‘অর্জুন রেড্ডি’ সিনেমায় স্নেহময়ী দাদির চরিত্রে তার পারফরম্যান্স দর্শক এখনো মনে রেখেছেন। বহু বছর ধরে রুপালি পর্দায় যেমন তার দেখা নেই, তেমনই জনসম্মুখেও অনুপস্থিত।

কয়েক দিন আগে তামিল সিনেমার প্রযোজক এভিএম সারাভানন মারা যান। তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে অটো রিকশায় করে উপস্থিত হন অভিনেত্রী কাঞ্চনা। তার খুব সাধারণ জীবনযাপন, সৌজন্যপূর্ণ শুভেচ্ছা বিনিময় দেখে অনেকে হতবাক। তারপর থেকে আলোচনায় রয়েছেন এই অভিনেত্রী।

কাঞ্চনাকে নিয়ে আলোচনা এখানেই থেমে নেই। বরং তার আরেকটি কাজ নিয়ে জোর চর্চা চলছে। ৮৬ বছরের এ অভিনেত্রী ১৩৬ কোটি টাকা মূল্যের জমি মন্দির নির্মাণের জন্য দান করেছেন। এ নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা কুড়াচ্ছেন, রয়েছেন চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে।

১৩৬ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ দান
ভারতীয় সিনেমার অনেক অভিনয়শিল্পী দান-খয়রাত করে থাকেন। কিন্তু কাঞ্চনার অংশগ্রহণ সম্পূর্ণ আলাদা। তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম (টিটিডি)-কে প্রায় ১০০ কোটি রুপির সম্পত্তি দান করেছেন তিনি। ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের প্রতি গভীর ভক্তি থেকে নিজের জীবনকে গড়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে এ অভিনেত্রী বিয়ে করেননি। আধ্যাত্মিকতা ও সেবাকেই জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

ভারতের চেন্নাইয়ের টি. নগর এবং জি. এন. চেট্টি রোডে কাঞ্চনা ও তার বোন গিরিজা পান্ডের মূল্যবান জমি রয়েছে। আত্মীয়-স্বজনেরা জমিটি দখল করার চেষ্টা করলে আইনি পথ বেছে নেন তারা। তারপর দীর্ঘ সময় আইনি লড়াই চালান। শেষ পর্যন্ত মামলায় জিতে কাঞ্চনা তার মানত পূরণ করেন। ছয় গ্রাউন্ডেরও বেশি জমি টিটিডি-কে দান করেন, যেখানে ভগবান ভেঙ্কটেশ্বর ও দেবী পদ্মাবতীর একটি বৃহৎ মন্দির নির্মিত হবে। বর্তমানে এই সম্পত্তির মূল্য ৮০-১০০ কোটি রুপির (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৮-১৩৬ কোটি টাকা) বেশি।

কাঞ্চনার জন্মকথা
১৯৩৯ সালের ১৬ আগস্ট মাদ্রাজে জন্মগ্রহণ করেন কাঞ্চনা। তার আসল নাম বসুন্ধরা দেবী। তার বাবা রামকৃষ্ণ শাস্ত্রী ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। খুব অল্প বয়সে শিল্পকলার প্রতি গভীর টান অনুভব করেন কাঞ্চনা; যা পড়াশোনার পাশাপাশি বিকশিত হয়। কম বয়সেই ভরতনাট্যম শিখেছিলেন তিনি। মাত্র ৯ বছর বয়সে মিউজিয়াম থিয়েটারে আরঙ্গেত্রমে পারফর্ম করেন। কাঞ্চনা গুড শেফার্ড কনভেন্টে পড়াশোনা করেন। পড়াশোনায়ও অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান তিনি। পরে ইথিরাজ কলেজ ফর উইমেনে ভর্তি হন। এখানেও নিজেকে প্রতিভাবান শিক্ষার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। কলেজ জীবনেই মঞ্চনাটকে যোগ দেন। ‘অ্যাজ ইউ লাইক ইট’, ‘লঙ্কেশ্বরণ’ নাটকে যথাক্রমে ‘সেলিয়া’ ও ‘সীতা’ চরিত্রে অভিনয় করেন কাঞ্চনা।

বিমানবালা থেকে রুপালি পর্দায়
শুরুতে এয়ার হোস্টেস হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হন কাঞ্চনা। ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময়ই কলেজ ছেড়ে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সে যোগ দেন তিনি। কিন্তু শিল্পীসত্তার টান তাকে নিয়ে যায় চলচ্চিত্র জগতে। একবার বম্বে গেলে কাঞ্চনাকে দেখেন পরিচালক মহেশ কৌল। তারপর তাকে স্ক্রিন টেস্টের প্রস্তাব দেন। একই সময়ে প্রযোজক চেঝিয়েন মাদ্রাজ বিমানবন্দরে পরিচালক সি. ভি. শ্রীধরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন কাঞ্চনাকে। শ্রীধর তার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। ১৯৬৪ সালে তামিল ভাষার ‘কাধালিকা নেরমিলা’ সিনেমায় অভিনয় করেন কাঞ্চনা। এটি তার অভিষেক চলচ্চিত্র। একই বছর মালায়ালাম ভাষার আরেকটি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এরপর বদলে যায় এই অভিনেত্রীর জীবন।

তার পরের বছর তেলেগু ভাষার ৩টি, তামিল ভাষার ১টি সিনেমায় অভিনয় করেন কাঞ্চনা। ১৯৬৬ সালে তেলেগু ভাষার ২টি, তামিল ভাষার ৫টি সিনেমায় অভিনয় করেন কাঞ্চনা। দ্রুত সময়ের মধ্যে ৬০ ও ৭০ দশকের অন্যতম জনপ্রিয় নায়িকা হয়ে ওঠেন তিনি। দক্ষিণের বিভিন্ন ভাষার পাশাপাশি হিন্দি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন কাঞ্চনা। দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সে সময়ের প্রায় সব শীর্ষ নায়কের সঙ্গে কাজ করেছেন। ‘প্রেমা নগর’, ‘শ্রীকৃষ্ণাবতারম’, ‘আনন্দ ভৈরবী’ এর মতো অনেক সফল সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেছেন কাঞ্চনা।

ঈশ্বরের ইচ্ছায় পরিচালকের সঙ্গে কাঞ্চনার সাক্ষাৎ
বিমানবালা হিসেবে যখন চাকরি শুরু করেন, তখন অর্থনৈতিক সংকটে ছিলেন অভিনেত্রী কাঞ্চনা। সংকট কাটাতে মাত্র ৬০০ রুপি বেতনে চাকরি করতেন তিনি। ঈশ্বরের ইচ্ছায়ই পরিচালক শ্রীধরের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল বলে মনে করেন কাঞ্চনা। সিলভার স্ক্রিন ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই অভিনেত্রী বলেছিলেন—“আমি বিশ্বাস করি, ঈশ্বর সব সময় আমাকে দেখছিলেন। শ্রীধর স্যারের সঙ্গে যখন দেখা হয়, তখন আমি আর্থিক সংকটে ছিলাম। আমার চেহারা দেখে তিনি খুব মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি যদি আমার সঙ্গে কাজ করো, তবে মানুষের মন জয় করবে।’ তবে আমি সন্দিহান ছিলাম। কারণ আমাদের বলা হয়েছিল, আমরা যেন মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ফাঁদে না পড়ি। কিন্তু অন্তর্দৃষ্টি আমাকে বলেছিল তাকে বিশ্বাস করতে, আমিও তাই করেছিলাম।”

চলচ্চিত্রের ব্যস্ততা
১৯৮৮ সালে তেলেগু, কন্নড় ভাষার বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেন কাঞ্চনা। তারপর দীর্ঘ বিরতি। এরপর সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা নির্মিত ‘অর্জুন রেড্ডি’ সিনেমায় অভিনয় করেন কাঞ্চনা। তেলেগু ভাষার এ সিনেমা ২০১৭ সালে মুক্তি পায়। তারপর গত ৮ বছরে আর কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি তাকে। তবে প্রভাসের ‘স্পিরিট’ সিনেমায় দেখা যাবে এই অভিনেত্রীকে।

অবিবাহিত কাঞ্চনার আধ্যাত্মিক জীবন
ব্রহ্মচার্য বেছে নিয়ে কখনো বিয়ে করেননি কাঞ্চনা। বর্তমানে আধ্যাত্মিক জীবনযাপন করছেন। তার ছোট বোন তাকে দেখাশোনা করেন। তার দিন কাটে প্রার্থনায় আর এতেই তৃপ্ত অভিনেত্রী। তার মর্যাদাপূর্ণ জীবন, দয়া ও অসাধারণ উদারতার গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed By: SISA IT