নিজস্ব প্রতিবেদক || শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, “এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। যার লক্ষ্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা।”
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, “হাদির ওপর আক্রমণ মানেই গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ। আমরা কখনোই কোনো প্রার্থীর ওপর হামলা করিনি—এর রেকর্ড নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের ইতিহাসে এমন ঘটনার নজির রয়েছে। একটি অপশক্তি সব সময় ফলাফল থেকে ফায়দা লুটে নিতে চায়।”
তিনি আরো বলেন, “আমি চাই এই ঘটনার আসল সত্য মানুষের সামনে আসুক। প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীরা চিহ্নিত হোক, রাজনৈতিক মুখোশ খুলে যাক। জনগণ সত্য জানার অধিকার রাখে।”
হাদিকে নির্বাচনি মাঠে দেখতে চান উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “শরিফ ওসমান হাদি দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলেছে। সে শুধু একজন প্রার্থী নয়—রাজপথে আমার মতোই একজন লড়াকু সৈনিক। আমি তাকে প্রতিদ্বন্দ্বি মনে করি না, সে আমার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা।”
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের সঙ্গে তুলনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, “৭১ সালে শত্রু ছিল একটাই। আর আজ বাংলাদেশ বহুমুখী শত্রুর আক্রমণে জর্জরিত। আমরা তখন যেমন লড়াই করেছি, আজও তেমনি এই দেশকে রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।”
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “আজ যারা ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন, তাদের সাবধান হয়ে যাওয়া উচিত। নইলে এ দেশের জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না।”
হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এর আগেও চট্টগ্রামে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এটি একটি বৃহত্তর চক্রান্ত। ইনশাল্লাহ, এই চক্রান্তের পর্দা একদিন উন্মোচিত হবে।”
প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “নির্বাচনের মাঠে ভয়ভীতি ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করে জনগণের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিএনপি কখনোই সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি।”
সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন ঢাকা-১০ আসনে বিএনপি প্রার্থী শেখ রবিউল আলম রবি, ঢাকা-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন, ঢাকা-৪ আসনের বিএনপি প্রার্থী তানভীর আহমেদ রবিন। তারা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, নিরপেক্ষ তদন্ত ও রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান।
সমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টন এলাকায় জনতার ঢল নামে। বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে অংশ নেন। “হাদির ওপর হামলা গণতন্ত্রের ওপর হামলা”, “সন্ত্রাস নয়, নির্বাচন চাই”—এমন নানা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
বক্তারা বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় গণতন্ত্র আরো গভীর সংকটে পড়বে বলে তারা সতর্ক করেন।